গুরুদায়িত্ব

1 min read

ছাদে নাতনিকে কোলে নিয়ে উদ্বিগ্নভাবে পায়চারী করছিলেন সুমনবাবু।

চাকরি পেয়ে ছেলে এখন পাকাপাকি ভাবে কোলকাতাবাসী। পারিবারিক কলহের জেরে একমাত্র ছেলের সঙ্গে এখন আর কোনো বনিবনা নেই। তবুও তো সে নিজের ছেলে, তাই দুঃখ পেলেও মনে মনে সবকিছু মানিয়ে নিয়েছেন।  ইদানিং সুমনবাবুর মনটা খুব একটা ভালো নেই।

“আচ্ছা দাদু তারাগুলো অত ছোট ছোট হয় কেন? আর আকাশে কি সুন্দর মিটিমিটি করে জ্বলে? কিভাবে গো!’’, আদুরে মিষ্টি গলায় বলল মামন।

সুমনবাবু বললেন, ‘’ওরা তো অনেক দূরে থাকে তাই, তাছাড়া তোমার ঠাম্মি রোজ সন্ধ্যায় গিয়ে ওদের আলো জ্বালিয়ে দিয়ে আসেন।‘’

মামন সাগ্রহে বলল, ‘’কোনটা ঠাম্মি?”

সাঁঝ-আকাশে পশ্চিমের উজ্জ্বল সন্ধ্যেতারাটাকে দেখিয়ে সুমনবাবু বললেন, ‘’ওইটা।“, বলে, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

রোজ সন্ধ্যেয় পড়াতে বসাবার আগে নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে সুমনবাবু ছাদে ক্ষণিক পায়চারী করেন।

মামনের বাবা-মা দু’জনেই কোলকাতার একটা বড় আই.টি. কোম্পানীতে কর্মরত। ওরা লাভ-ম্যারেজ করেছিল। এখন যে যার নিজের কাজে বড় ব্যাস্ত।

আয়া রেখে কি সব কাজ হয়? তাই ছোট্ট মামনকে দেখভাল করা নিয়ে দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্যের জেরে ওর বাবা-মা এখন ডিভোর্সী। বছর পাঁচেক আগে ওদের ডিভোর্স হয়েছে। এই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলীর যুগে কেউ আর মামনের দায়িত্ব নিতে চায়নি। নিজেরা আবার ফ্যামিলী গড়ে যে যার নতুন সংসার বসিয়ে নিয়েছে।

যখন মামনের বাবা-মা আর মামাবাড়ীর লোকজনেরা ওকে বোঝা ভেবে হাত গুটিয়ে নিয়ে কোলকাতা লাগোয়া একটা অনাথ আশ্রমে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল, এক পরমাত্মীয় মারফত খবর পেয়ে তখনই নিজের পুত্রকে ত্যাজ্যপুত্র করে বছর সাতেকের মামনকে আশ্রম থেকে নিজের বাড়ীতে এনে, ওকে মানুষ করবার দায়িত্ব সুমনবাবু আর রুণুবালাদেবী নিজেদের ঘাড়ে নিয়েছিলেন।

হাসি-ঠাট্টায় মিলে-মিশে দাদু-ঠাম্মি, নাতনি, তিনজনের জীবন বেশ সুখেই কাটছিল। মামনও নিজের বাবা-মায়ের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। কিন্তু বাধ সাধল ভাগ্য, বছর খানেক হল মামনের ঠাম্মি রুণুবালাদেবী হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত হয়েছেন।

নাতনিকে মানুষের মত মানুষ করবার ভীষণ বড় একটা গুরুদায়িত্ব এখন একা রিটায়ার্ড প্রাথমিক শিক্ষক সুমনবাবুর কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে গিয়েছেন রুণুবালাদেবী।

You May Also Like