লকডাউনের জেরে সংকটে মালদার পান চাষীরা

1 min read

লকডাউনের জেরে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছেন মালদার পান চাষীরা। এতদিন বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে পানের বোরজ শুকিয়ে যাবার ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিয়েছিল। যার ফলে উৎপাদন অনেকটাই কম হয়ে পড়েছে। তার ওপর চলছে লকডাউন। যার জেরে বেচাকেনা একেবারেই বন্ধ। আর এরপরই আসতে চলেছে ঘূর্ণিঝড় যশ। আর এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পানের বোরজের যে একেবারে দফারফা হয়ে যেতে পারে তা নিয়ে এখন থেকে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মালদার চাষিরা। ইতিমধ্যে যতটা পেরেছেন পানপাতা ভেঙে বাজারে পাইকারদের কাছে বিক্রি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন চাষিরা । কিন্তু লকডাউনের জেরে খদ্দেরদের অভাবে পান প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার জোগাড়। তাই প্রতিদিনই অসংখ্য পানপাতা ভেঙে নষ্ট করে ফেলে দিতে হচ্ছে চাষীদের। গত বছরের মতো এবছরও পান চাষীরা আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন। এই অবস্থায় কেউ কেউ সংসার চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলে আত্মহত্যার হুমকিও পর্যন্ত দিয়েছেন। 

উল্লেখ্য, মালদা জেলার মধ্যে সবথেকে বেশি পান চাষ হয় পুরাতন মালদা ব্লকের মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। এই এলাকায় কমপক্ষে ১০০ হেক্টর জমি জুড়ে পানের বোরজ রয়েছে। এখানকার বিভিন্ন ধরনের পান পাতা উৎপাদনের জেরে মালদা সহ আশেপাশের এলাকায় সরবরাহ হয়ে থাকে। মূলত মালদা জেলায় পানের জোগান দেয় পুরাতন মালদা ব্লকের মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চাষিরা। কিন্তু লকডাউনের জেরে এবারে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন পান চাষীরা। তাঁদের বক্তব্য, “করোণা পরিস্থিতির মধ্যে পান রপ্তানি করা যাচ্ছে না। সকাল ৭টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত বাজার বসছে। তিন ঘন্টার বাজারে পানের বিক্রিও নেই। ফলে প্রতিদিনই অসংখ্য প্রাণ পচে নষ্ট হচ্ছে। সেগুলি ফেলে দিতে হচ্ছে। তার ওপর আবার প্রবল ঘূর্ণিঝড় আসছে। এই অবস্থায় পানের বোরজ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবার আশংকা করছি।” এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন সহযোগিতা না করলে চাষীদের একেবারে পরিবার নিয়ে পথে বসে যেতে হবে।

মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মনোহরপুর, মহাদেবপুর এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য পানের বোরজ। ওই এলাকার পানচাষি কানু মন্ডল, গৌড়পদ মন্ডল, সঞ্জয় মন্ডলদের বক্তব্য, “করোনা পরিস্থিতির মধ্যে লকডাউন চলছে। তার ওপর তুলনামূলক বৃষ্টি কম হয়েছে। এর জেরে পানের লতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানের মাথা শরু হয়ে, গোড়া পচা রোগ দেখা দিচ্ছে। পানপাতা পেরে বাজারে বিক্রি করতে গেলেও তা করা যাচ্ছে না। কারণ, এই মুহূর্তে লকডাউন চলছে। কয়েকঘণ্টা ব্যবসায় পান বিক্রি হচ্ছে না। বাইরে থেকে পাইকারেরা আসছে না। এই বছর কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতির মুখে পড়তে হবে এলাকার কয়েক’শ পানচাষীদের। তারওপর শুনেছি দু-একদিনের মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে পশ্চিমবঙ্গে। তার প্রভাব মালদাতেও থাকবে। এই অবস্থায় পানের বোরজ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এখন পানচাষীদের দিশেহারা অবস্থা।”

ওইসব পানচাষীদের আরও অভিযোগ, শ্রমিক দিয়ে পান ভাঙ্গানোর কাজ করেও লাভ হচ্ছে না। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে এবছর পান চাষ শুরু করেছিলাম, কিন্তু কে জানত করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ এভাবে বেড়ে যাবে। যার জেরে লকডাউন হতে পারে। সব শেষ হয়ে গেল। সংসার চালাবো কি করে। কেউ কেউ আবার আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছে। এই অবস্থায় প্রশাসনকে সহযোগিতার আশ্বাসের কথা বলেছেন পান চাষীরা।

উদ্যানপালন দফতরের অধিকর্তা রাহুল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, পুরাতন মালদা ব্লকের মূলত পান চাষ হয়ে থাকে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা করোনা মহামারীতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই।

মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শুভলক্ষ্মী গাইন জানিয়েছেন, পানচাষীদের সমস্যার কথা শুনেছি। একদিকে করোনা পরিস্থিতি, অন্যদিকে আবার ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব আসতে চলেছে। সব মিলিয়ে পানচাষীদের এখন দিশেহারা অবস্থা। এব্যাপারে প্রশাসন যাতে চাষীদের পাশে সহযোগিতার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করে, সে বিষয়েও জানানো হবে।

You May Also Like