বিবেক বোস

1 min read

আমাদের পাড়ার বিবেক বোস তোলপাড় জিনিস। আমাদের এই মফস্বল শহরে মাত্র দুই-একজনেরই দিল্লি শহরে বসবাস। তার মধ্যে বিবেক একজন। কাজ করতেন কোন কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থায়। বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত। বৎসরান্তে একবার আগমন হয় দেশের বাড়িতে সম্পত্তির দেখাশোনা ও দেশের মাটির টানে। এসেই বসে পড়েন পড়ার চায়ের ঠেকে। ঘিরে ধরে সবাই। ঝুঁকে পড়ে অল্প বয়সীরা আর বুড়োরা তো আছেই। গল্প, আর কিছু নয় শুধুমাত্র গল্পের টানে। শুরু হয় গল্প।
মোদিজীর কথা উঠলো। বিবেক বলল,
— নরেন্দ্র মোদী? আরে আমি তো ওকে কবে থেকেই চিনি। আমি নরু ভাই বলি সেও বিবেকদা বলতে অজ্ঞান। কোন কাজ আমাকে জিজ্ঞাসা না করে করে না। আমি তখন আমেদাবাদে পোস্টেড। একদিন ডেকে পাঠালো। বলল তোমার একটা পরামর্শ চাই বিবেকদা, লোকসভা নির্বাচনে লড়বো কিনা বুঝতে পারছি না।
— আমি বললাম নিশ্চয়ই লড়বে। তোমাকে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সীতেই মানায়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। একটু ঝামেলা পাকাচ্ছিল পাকিস্তানের হয়ে। সেই সময় আমি বিদেশ দপ্তরে কাজ করি। নারুভাই বলল একবার যাও তো তুমি, একটু কড়কে দিয়ে এসো ব্যাটাকে।
— তুমি গেলে আমেরিকা? হরিহর সারখেল জিজ্ঞাসা করলো।
— কি আর করবো, নরু ভাই এর কথা তো ফেলতে পারি না। তারওপর দেশের প্রধানমন্ত্রী।
— দেখা হলো ট্রাম্পের সাথে?
— দেখা হলো শুধু নয়, তাকে এমন ভাবে Impress করে দিলাম যে তারপর থেকে ভিভেক বলতে অজ্ঞান। কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না আমাকে জিজ্ঞাসা না করে। বাইডেনের সাথেও আলাপ আছে তবে এখনো অতটা ঘনিষ্ঠতা হয় নি।
— তা, পুতিনের সাথে যোগাযোগ নেই? ইউক্রেনের যুদ্ধটা আটকাতে পারলে না?
— যোগাযোগ নেই? বলিস কী? নিশ্চয়ই যোগাযোগ আছে, তবে কিনা রিটায়ার করে গেছি এখন আর এসব বিষয়ে কথা বলা ভালো দেখায় না।
কংগ্রেসের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হচ্ছিল। রাহুল গাঁধীর কথা উঠলো। বিবেকদা বলল,
— রাহুল? ওকে তো হাফ প্যান্ট পরা অবস্থা থেকে দেখেছি। ওর বাবা রাজীব গান্ধীর সাথে আমার পরিচয় ছিল। যে দিন রাজীব আক্রান্ত হলো সেই দিনের সভায় যেতে আমি তাকে বারন করেছিলাম কিন্তু শুনলো না। কি আর করা যাবে, নিয়তি।
ক্রমশ ক্রমশ দেখা গেল দেশ বিদেশের সমস্ত বড়ো বড়ো রাজনৈতিক নেতা এমন কি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে মমতা বন্দোপাধ্যায় পর্যন্ত কি জানি কি এক অমোঘ আকর্ষণে বিবেক বোসের পরামর্শ ছাড়া কোন কাজ করেন না। অজিত সামন্ত বলল,
— দাদা, একদিন যাবো আপনার বাড়িতে। আমার ছেলের একটা চাকরি যদি হয়, আপনার এতো জানাশোনা। আমার ছেলেটা ইকনমিক্স এ এম এ করে বসে আছে।
— হাঁ হাঁ নিশ্চয়ই আসবে। কেন আসবে না? কতো লোকই তো আসে আমার বাড়িতে। এই তো সেদিন দীপিকা আর রণবীর সিং এসে বলল ‘দাদা দিল্লিতে একটা কাজে এসেছি তোমার বাড়িতে থাকবো।
— দীপিকা পাড়ুকোন আর রণবীর সিং পাঁচ তারা হোটেলে না থেকে আপনার বাড়িতে থাকবে? অজিত সামন্তর চোখ ছানাবড়া।
— কেন থাকবে না বলো? তোমাদের বিবেকদার বাড়ি কী পাঁচ তারা হোটেলের থেকে কিছু কম? সারা দেশের যতো ভালো ভালো মাল মেটিরিয়াল দিয়ে বাড়ি বানিয়েছি। বাড়ির ইনটিরিয়র ডেকরেশন দেখলে মাথা ঘুরে যাবে। সব বিদেশ থেকে আনা। কে থাকেনি আমার দিল্লির বাড়িতে? রাজ কাপুর থেকে রণধীর কাপুর। উত্তম কুমার থেকে দেব। হেমা মালিনী থেকে স্বস্তিকা মুখার্জি সবাই বিবেকদা বলতে অজ্ঞান।বেচারা বাপ্পী মারা গেল অকালে। প্রায়ই আসতো, বলতো দেখতো বিবেকদা এই সুরটা ঠিক আছে কিনা ।
— বাপ্পী, মানে বাপ্পী লাহিড়ী? তোমাকে গান শোনাতো? তার মানে তুমি গানও বোঝো? চায়ে চুমুক দিয়ে বিষম খেলো শ্রীনাথ, কাশতে লাগল খক্ খক্ করে।
চায়ের গেলাসটা ঠক করে টেবিলের ওপর নামিয়ে রেখে হারাণ জ্যাঠা বলে উঠলো,
— বাঃ, তাহলে তো কোন সমস্যাই রইলো না। ভোটে দাঁড়িয়ে যাও ভায়া তোমার নরু ভাই এর পরে তুমিই হবে দেশের ভবিষ্যত্ প্রধানমন্ত্রী। আমরা তোমার দলকেই ভোট দেবো।
— না না তা কি করে হয় আমি সামান্য মানুষ। বিবেক বোসের বিনীত উক্তি।
— সামান্য মানুষ, বল কী ভায়া? সারা পৃথিবীর তাবর তাবর নেতারা যার কথায় ওঠে বসে সে সামান্য মানুষ? শুধু দেশ কেন? সমস্ত পৃথিবীর মানুষ তোমাকে চায়। সেই একটা গান আছে না? পৃথিবী আমারে চায়, রেখো না বেঁধে আমায়। তা আমরা তোমাকে আমাদের এই চায়ের টেবিলের আড্ডা থেকে পৃথিবীর স্বার্থে মুক্তি দিলাম। সবাই বলো, থ্রি চিয়ার্স ফর বিবেক বোস হিপ হিপ হুররে।
কিন্তু ভায়া, প্রধানমন্ত্রী হলে আমাদের কথা কিন্তু ভুলো না।
— হেঁ হেঁ হেঁ বিনীত হাসি বিবেকের। কি যে বলেন আপনাদের ভুলে যাবো? আপনাদের ভুলে যাওয়া মানে আমার দেশকে ভুলে যাওয়া।
উঠে দাঁড়ালো বিবেক।
— আচ্ছা আজ তবে চলি। কাল সকালের ট্রেনে কলকাতায় যেতে হবে দুপুরে দিল্লির ফ্লাইট।
বিবেক বোস হনহনিয়ে হাঁটা লাগাল বাড়ির দিকে।
— ও দাদা, আপনার দিল্লির বাড়ির ঠিকানাটা…….
পেছন থেকে চিৎকার করলো অজিত সামন্ত। দাদা শুনতেও পেল না ফিরেও তাকালো না। হো হো করে হাসির ঢেউ উঠলো চায়ের টেবিল ঘিরে।
— তা যাই বলুক না কেন, বিবেক আমাদের জমাটি মানুষ। হারাণ জ্যাঠা বলে উঠলো।

You May Also Like