সেফটিপিনে মোড়া সাজ, হাটে-বাজারে সবার প্রিয় অধীর বর্মন

ময়নাগুড়ি জংশন ও বাজার লাগোয়া এলাকায় এক ব্যতিক্রমী মানুষকে ঘিরে জমছে জনতার ভিড়। কৌতূহলী চোখ, মোবাইল ক্যামেরা, শিশুদের ডাক সব মিলিয়ে এখন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ‘সেফটিপিন ম্যান’।

তিনি অধীর বর্মন। বাড়ি আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটার মশলাপট্টি এলাকায়। আগে অন্য ব্যবসা করতেন তিনি। কিন্তু সেই ব্যবসায় লাভ না হওয়ায় তা ছেড়ে নতুন পথ বেছে নেন। গত তিন বছর ধরে গ্রামে গ্রামে, হাট-বাজারে ঘুরে ঘুরে সেফটিপিন বিক্রি করাই এখন তাঁর রোজগার।

কিন্তু অনেকেই তো সেফটিপিন বিক্রি করে, তাহলে অধীর বর্মন কেন আলাদা? অধীরের বিশেষত্ব তাঁর হাঁটাচলাই বলে দিচ্ছে অন্য গল্প। তাঁর জামা-প্যান্ট, টুপি, চশমা এমনকি চশমার ফ্রেমেও গাঁথা রয়েছে অসংখ্য সেফটিপিন। সারা শরীরে পিন বিঁধিয়ে তিনি যে বেশভূষা ধারণ করেছে, তা দেখেই স্থানীয়রা তাঁকে ডাকছে ‘সেফটিপিন ম্যান’। আর শিশুরা আদর করে বলছে—‘সেফটিপিন দাদু’, ‘সেফটিপিন দাদু’।

মুখে চিরচেনা হাসি, কথায় আন্তরিকতা। জনগণ ডাকলে হাসিমুখেই সাড়া দেন অধীর। ময়নাগুড়ির বাজার এলাকায় দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, “গত তিন বছর ধরে আমি ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকায় এভাবেই সেফটিপিন বিক্রি করে সংসার চালাই। যা বিক্রি হয়, তা দিয়েই সংসার চলে যায়। আমি আনন্দের সঙ্গেই কাজ করি।”

সেফটিপিন বিক্রি করতেই আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা থেকে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে এসে পৌঁছেছেন তিনি। তাঁর মতে, বিশেষ সাজার মাধ্যমে মানুষের নজর কাড়তে পারলে ব্যবসাও কিছুটা সহজ হয় আর মানুষকে আনন্দ দিতে পারাও একরকম ভালো লাগা।

এমন অনন্য সাজ ও সহজ – সরল ব্যবহারের কারণেই তিনি এখন ভাইরাল। তাঁর চারপাশে মানুষ ভিড় করে ছবি তুলছে, অনেকেই খোঁজ নিচ্ছেন তাঁর জীবন সংগ্রামের। সমাজমাধ্যমে ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর নানা ভিডিও ও ছবি।

এই ‘পিনবদ্ধ জীবনের’ মধ্যেই অধীর খুঁজে নিয়েছেন নিজের বেঁচে থাকার আনন্দ। ব্যতিক্রমী হলেও এটি এক সংগ্রামী মানুষের জীবিকার বাস্তব গল্প, যা ময়নাগুড়ির রোজকার ভিড়ের মধ্যেই ছড়িয়ে দিচ্ছে এক মানবিক বার্তা।