বয়স এবং আইভিএফ: আপনার ৩০ এবং ৪০ বছর বয়সের মধ্যে ফারাক কোথায়?

লেখিকা- শ্রদ্ধা ত্রিপাঠী বিচপুরিয়া,  বিড়লা ফার্টিলিটি অ্যান্ড আইভিএফ,  শিলিগুড়ি-এর উর্বরতা বিশেষজ্ঞ

বয়স উর্বরতার ক্ষেত্রে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে। আইভিএফ কী ভাবে করা হবে এবং এর সাফল্যের সম্ভাবনা কতটা- তা নির্ধারণের মূল বিষয়গুলির মধ্যে একটি হল আপনার বয়স। যদিও আইভিএফ  যে কোনও বয়সেই সমস্যার সমাধানসূত্র বের করতে পারে, কিন্তু আপনার বয়স ৩০ না ৪০-এর কোঠায় তার উপরে এর প্রক্রিয়া এবং ফলাফলগুলি নির্ভর করে। 

ত্রিশের কোঠায় আইভিএফ: এক সরল প্রক্রিয়া

ত্রিশের কোঠার প্রথম দিকের মহিলারা আইভিএফের ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকেন। তাঁদের ডিম্বাশয়ের সঞ্চয় সাধারণত ভাল থাকে এবং ডিম্বাণুর মানও উন্নত হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে ৩০ বছর বয়সে প্রায় ৭০% ডিম্বাণু ক্রোমোজোমগতভাবে স্বাভাবিক থাকে। ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় ৬০%-এ নেমে আসে। এর অর্থ হল, ত্রিশের কোঠার প্রথম দিকে আইভিএফ হলে নিষেক সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি,  ভ্রূণ রোপনের সম্ভাবনা বেশি এবং গর্ভাবস্থায় জটিলতার সম্ভাবনা কম থাকে।  

এই বয়সের মহিলারা উদ্দীপনাবর্ধক ওষুধের প্রতি ভালো সাড়া দেন, ফলে তাঁদের জন্য প্রায়শই কম ডোজের প্রয়োজন হয় এবং জটিলতা কম হয়। গর্ভপাত, ক্রোমোজোমগত অস্বাভাবিকতা  অথবা গর্ভকালীন স্বাস্থ্য সমস্যার মতো ঝুঁকিও বয়স্কদের তুলনায় কম হয়- যা আইভিএফের যাত্রাকে মসৃণ,  আরও অনুধাবনযোগ্য এবং আরও বেশি সফল করে তোলে।

৪০-এর দশকে আইভিএফ:  জটিলতর দৃশ্যপট

যখন একজন মহিলা ৪০ বছর বয়সে পৌঁছান,   তখন তাঁর শরীরে বেশ কিছু জৈবিক পরিবর্তন ঘটে- যা তাঁর উর্বরতার উপরে তীব্র প্রভাব ফেলতে শুরু করে। ডিম্বাণুর সংখ্যা এবং গুণমান লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পায়। এই বয়সে,  মাত্র ৩৫% ডিম্বাণু ক্রোমোজোমগতভাবে স্বাভাবিক থাকে। এটি গর্ভধারণের সম্ভাবনা এবং সুস্থ গর্ভাবস্থাকে দীর্ঘমেয়াদীভাবে বহন করার ক্ষমতা- উভয়কেই প্রভাবিত করতে পারে।

বয়স বাড়লে এএমএইচ (অ্যান্টি-মুলেরিয়ান হরমোন) স্তর এবং অ্যান্ট্রাল ফলিকল কাউন্টের মতো হরমোন সূচকগুলি কম থাকে,  যার অর্থ কার্যকর ডিম পুনরুদ্ধারের জন্য শক্তিশালী উদ্দীপনার প্রয়োজন হতে পারে। তাই আইভিএফ চক্রে উচ্চ মাত্রার ওষুধ প্রদান,  আরও ঘন ঘন পর্যবেক্ষণ এবং ফলাফল উন্নত করার জন্য প্রি-ইমপ্লান্টেশন জেনেটিক টেস্টিং (PGT-A) এর মতো অতিরিক্ত পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

৪০ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের গর্ভাবস্থা-সম্পর্কিত জটিলতার ঝুঁকিও বেশি হয়, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এবং অকাল প্রসব। কিছু ক্ষেত্রে, সুস্থ গর্ভাবস্থার সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য দাতার ডিম ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।

আসল কথা: সূচনা হোক সচেতনতার মাধ্যমে

আপনার বয়স ৩০ বা ৪০- যাই হোক না কেন,  আইভিএফ একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে বিদ্যমান। তবে, বয়স অনুসারে আপনার স্বতন্ত্র জৈবিক প্রোফাইলের সঙ্গে এই প্রক্রিয়াকে মানিয়ে নিতে হবে। যত তাড়াতাড়ি উর্বরতা মূল্যায়ন করা হবে,  আপনার কাছে তত বেশি বিকল্প থাকবে। সঠিক নির্দেশনা, চিকিৎসা সেবা এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে উভয় বয়সেই সন্তানধারণ সম্ভব;  শুধু ভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে।