পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) বর্তমানে নারীদের অন্যতম সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই রোগ নিয়ে এখনও বিভ্রান্তি প্রচুর এবং চিকিৎসা শুরু করতে বিলম্বও বড় চিন্তার কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, প্রজননক্ষম বয়সের প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে ১ জন পিসিওএস-এ আক্রান্ত। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হল, সারা বিশ্বে প্রায় ৭০% নারীর ক্ষেত্রে এই রোগ শনাক্তই হয়নি, অর্থাৎ তাঁরা নিজের অজান্তেই এই রোগ শরীরে নিয়ে বাস করছেন। এর আড়ালে লুকিয়ে আছে এক কঠিন বাস্তব। তা হল, সঠিক রোগনির্ণয় ছাড়াই, অসংখ্য নারী বছরের পর বছর ধরে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ওজন পরিবর্তন, ত্বক ও চুলের সমস্যা নিয়ে ভুগতে থাকেন।
বিরলা ফার্টিলিটি অ্যান্ড আইভিএফ, শিলিগুড়ির ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ডা. শ্রদ্ধা ত্রিপাঠী বিচপুরিয়া জানান, এই উপসর্গগুলিকে প্রায়শই কেবল “বয়ঃসন্ধির সমস্যা” বা “জীবনযাপনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া” হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া হয়, আর তার ফলেই ধীরে ধীরে দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি তৈরি হতে থাকে।
এই সমস্যার সমাধান করতেই বিরলা ফার্টিলিটি অ্যান্ড আইভিএফ চালু করেছে বিশেষ পিসিওএস ক্লিনিকস্, যেখানে মূল গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে রোগের দ্রুত শনাক্তকরণ এবং নারীদের এ বিষয়ে সঠিক ধারণা প্রদানের ওপর। বিলম্বিত শনাক্তকরণ থেকে সক্রিয় পরিচর্যার পথে এই পরিবর্তন নারীদের সুস্থতা ও নিরাময় নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
সচেতনতাই প্রথম পদক্ষেপ
রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার চেয়েও গভীরতর বিষয় হল সচেতনতা বিস্তার। সচেতনতা মানে শুধুই পিসিওএস সম্পর্কে জানা নয়, আসল সচেতনতা হল রোগের লক্ষণগুলির যোগসূত্র খুঁজে বের করা, প্রশ্ন করা এবং বোঝা যে উপসর্গগুলি আসলে রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। গবেষণা বলছে, শহুরে নারীদের মধ্যে পিসিওএস-এর হার বেশি, যা পড়াশোনার চাপ, ঘুমের অভাব ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত। এই সংযোগগুলি সম্পর্কে সচেতনতা না থাকলে, সময়মতো চিকিৎসার সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে ।
পিসিওএস ক্লিনিকগুলি এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছে- যেখানে মহিলাদের ও তাঁদের পরিবারকে এই সব লক্ষণগুলি প্রথমেই চিহ্নিত করতে উৎসাহিত করা হয়। এভাবে, সচেতনতা নিজেই এক ধরনের প্রতিরোধ হয়ে দাঁড়ায়।
দ্রুত রোগ নির্ণয়ের সুফল
যদি পিসিওএস প্রথমাবস্থায় শনাক্ত করা যায়, বিশেষজ্ঞরা সংশ্লিষ্ট রোগিনীর জন্য উপযুক্ত নির্দেশনা-সহ পদক্ষেপ করতে পারেন। এর মধ্যে জীবনশৈলী সংক্রান্ত সহায়তা, পুষ্টি পরিকল্পনা, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অথবা উর্বরতা সংক্রান্ত পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, পিসিওএস শুধুই অ্যানোভুলেটরি বন্ধ্যাত্বের একটি প্রধান কারণ নয়, এটি ইনসুলিন প্রতিরোধ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের সঙ্গেও অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। প্রথমাবস্থায় রোগ নির্ণয় হলে, এই সব ঝুঁকিগুলি বৃদ্ধি পাওয়ার অনেক আগেই চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়।
বিড়লা ফার্টিলিটি এবং আইভিএফ-এ রোগ নির্ণয় প্রক্রিয়াটি ইচ্ছাকৃতভাবেই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিচালিত হয়। কেবল হরমোন বা আল্ট্রাসাউন্ডের ফলাফলের দিকে দৃষ্টি সীমাবদ্ধ না রেখে, স্বাস্থের সামগ্রিক ও বৃহত্তর চিত্রের দিকে নজর দেওয়া হয় এখানে। যার লক্ষ্য হল, গোটা বিষয় নিয়ে স্পষ্ট ছবি সামনে আনা এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করা।
পিসিওএস-এর চিকিৎসার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ
কোনও জটিল চিকিৎসা পদ্ধতি নয়, পিসিওএস-এর উন্নত পরিচর্যা শুরু হয় অতীতে কী ঘটছে- তা বোঝা এবং সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে। সচেতনতা ও প্রাথমিক শনাক্তকরণকে মূল হাতিয়ার করে বিরলা ফার্টিলিটি অ্যান্ড আইভিএফ-এর পিসিওএস ক্লিনিকগুলি নিশ্চিত করছে যে, নারীদের সঠিক উত্তরের আশায় আর বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হবে না।
