তাওই নদীতে সেতু বিপর্যয়: সেনার ‘টাইগার ডিভিশন’-এর রেকর্ড উদ্ধার অভিযান

ভয়াবহ বর্ষণ আর আকস্মিক বন্যার ফলে তাওই নদীর উপর নির্মিত জম্মুর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভেঙে পড়তেই মুহূর্তে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে শহরের সঙ্গে আশপাশের এলাকার যোগাযোগ। চারদিকের হাজারো মানুষ কার্যত আটকে পড়ে জীবন-মরণ সঙ্কটে। এমনই এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জীবনরক্ষাকারী হয়ে ওঠে ভারতীয় সেনা। সেনার ‘টাইগার ডিভিশন’-এর ইঞ্জিনিয়াররা একটানা পরিশ্রম করে মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই ১১০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে। এই দ্রুত পদক্ষেপে পুনরায় শুরু হয় যানবাহন চলাচল ও মানুষের স্বস্তি ফেরে।

জম্মুর উপর দিয়ে প্রবাহিত তাওই নদীর চতুর্থ সেতুর একটি অংশ ভেঙে পড়ার পর থেকেই প্রশাসনের দুশ্চিন্তা শুরু হয়। কারণ এই সেতুটি শুধু সাধারণ মানুষের চলাচল নয়, জরুরি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও ছিল অপরিহার্য। সেতু ভেঙে যাওয়ায় চারদিকে ভেসে যায় আতঙ্ক। ঠিক তখনই সেনার ইঞ্জিনিয়ার দল মাঠে নামে।

দুপুর থেকে শুরু করে রাতভর কাজ করে তারা। প্রবল বৃষ্টি, কাদামাটি, ধসে যাওয়া অ্যাপ্রোচ রাস্তা আর অস্বস্তিকর আবহাওয়া। সব বাধাকে উপেক্ষা করে সেবা নতুন করে তৈরি করে ১১০ ফুটের বেইলি ব্রিজ। সাধারণত এ ধরনের সেতু তৈরি করতে কয়েকদিন লেগে যায়, কিন্তু সেনারা রেকর্ড সময়ে কাজ শেষ করে দেখিয়ে দিলেন তাদের সক্ষমতা।

এই ব্রিজ স্থাপন হওয়ার পরই আটকে থাকা প্রায় এক হাজার মানুষকে নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সেনা ও উদ্ধারকর্মীরা নৌকা ও অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে দুর্গতদের নিয়ে আসেন। একই সঙ্গে জরুরি খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হয়। ফলে বন্যাকবলিত মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেনার এই উদ্যোগকে আখ্যা দেওয়া হয়েছে “জীবনরক্ষাকারী পদক্ষেপ” হিসেবে। “যদি সেনারা এত অল্প সময়ে ব্রিজটি তৈরি না করতো, তবে বিপর্যয় আরও বড় আকার নিত।”

অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের কণ্ঠে কৃতজ্ঞতার সুর স্থানীয়রা জানান “আমরা ভেবেছিলাম দিনকে দিন আটকে থাকতে হবে। কিন্তু সেনারা যে দ্রুত সেতু বানিয়ে দিলেন, তা কল্পনারও বাইরে। তারা আমাদের জীবনের রক্ষাকর্তা।”

ভারতীয় সেনার এই উদ্যোগ ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জরুরি পরিস্থিতিতে সেনার ইঞ্জিনিয়াররা যে দক্ষতা, গতি ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তা শুধু জম্মু নয়, গোটা দেশের কাছে গর্বের বিষয়। এই বেইলি ব্রিজ আপাতত অস্থায়ী হলেও, এটি এখন এলাকার মানুষের কাছে নতুন “জীবনরেখা”।