আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি দিন। তারপরেই ঢাকের বোল, কাঁসরের ধ্বনি আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হবে বাংলার আকাশ-বাতাস। শুরু হবে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব—শারদীয়া দুর্গাপুজো। শহর হোক বা মফস্বল, সর্বত্র এখন উৎসবের আমেজ। সেই আঁচ এসে লেগেছে শিল্পী পাড়াতে।
ইতিমধ্যেই শহরের কুমোরটুলি, গহনাশিল্পীদের কারখানায় শুরু হয়ে গিয়েছে যুদ্ধকালীন তৎপরতা। সময়ের সাথে লড়াই করে প্রতিমা ও গহনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় শিল্পীরা।
বালুরঘাটের এক জনপ্রিয় মৃৎশিল্পী পাপাই পাল জানান— “সময় খুবই কম। হাতে গোনা দিন। এখন সকাল-সন্ধ্যা নয়, বলতে গেলে রাত-দিন এক করে কাজ করছি। একটার পর একটা অর্ডার, প্রতিমা গড়ে সময়ের মধ্যে মণ্ডপে পৌঁছে দিতে হবে।”
শুধু প্রতিমা নয়, দেবী দুর্গার রূপকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে দরকার হয় সাজ-সজ্জার, বিশেষ করে গহনার। আর সেই কাজে এখন ব্যস্ত জেলারই বিশিষ্ট গহনাশিল্পী দেবজ্যোতি মহড়া।
বালুরঘাটের এক গহনা কারখানার কর্তা জানান— “ তৈরি গহনা শুধু জেলার মধ্যেই নয়, পাঠানো হয়েছে কলকাতা, রাজ্যের বাইরেও। এমনকি কিছু গহনা গিয়েছে বিদেশেও। নতুন ডিজাইন, নতুন ভাবনা—সব মিলিয়ে এবারের পুজোয় চমক থাকছেই।”
এখনও চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা অর্ডার মেটাতে শিল্পীরা দিনরাত এক করে খেটে চলেছেন।
এক শিল্পীর কথায়, “ভিড় কম হলেও, কাজে কোনও ফাঁক নেই। গুণমান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সব কাজ শেষ করাই লক্ষ্য।”
এদিকে পুজোর থিম ও মণ্ডপসজ্জা নিয়েও জেলাজুড়ে উন্মাদনা তুঙ্গে। মৃৎশিল্পীদের মতে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের বালুরঘাটের দুর্গাপুজো অনেক বেশি জাঁকজমকপূর্ণ হতে চলেছে। প্রতিমা থেকে গহনা, থিম থেকে আলোকসজ্জা—সবকিছুতেই থাকছে নতুনত্বের ছোঁয়া।
সবশেষে শিল্পীদের কণ্ঠে উঠে এল আবেগঘন বার্তা—“আমরা শুধু প্রতিমা তৈরি করছি না, গড়ছি আবেগ, বিশ্বাস আর বাঙালির সংস্কৃতি। এ কাজ আমাদের কাছে শুধুই পেশা নয়, এক মহান দায়িত্ব।”
এইভাবেই শিল্পীদের হাতে তৈরি হচ্ছে একেকটি পুজো, একেকটি মুহূর্ত, একেকটি চেতনা। এবার বালুরঘাট প্রস্তুত হচ্ছে রাজ্যকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো এক নতুন দুর্গোৎসবের সাক্ষী হতে। এখন শুধু অপেক্ষা সেই শুভ মুহূর্তটির—মায়ের আগমনের।
