নয়াদিল্লি, ১১ সেপ্টেম্বর: সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতির মতো পদাধিকারীরা ব্যর্থ হলে সুপ্রিম কোর্ট কি নীরব থাকতে পারে—এই প্রশ্ন তুলে এক গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক বিতর্কে হস্তক্ষেপ করল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি ডি. আর. গাভাই-এর নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির রেফারেন্স সংক্রান্ত মামলায় রায় সংরক্ষণ করে এই মন্তব্য করেন।
মামলাটি মূলত সংবিধানের ২০০ ও ২০১ অনুচ্ছেদ ঘিরে, যেখানে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির বিল অনুমোদনের সময়সীমা নির্ধারণ করা যায় কি না, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। দশ দিনের দীর্ঘ শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল আর. ভেঙ্কটরামণি, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা, এবং প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বল, অভিষেক মনু সিংভি, গোপাল সুব্রহ্মণ্যম, অরবিন্দ দাতার প্রমুখ অংশ নেন।
শুনানির শেষ দিনে বিচারপতি গাভাই বলেন, “যে-ই হোন না কেন, আমরা সংবিধানের রক্ষক। আমি নিজে ‘separation of powers’-এর নীতিতে বিশ্বাসী। বিচারিক সক্রিয়তা থাকা উচিত, তবে তা যেন ‘judicial terrorism’ বা ‘adventurism’ না হয়। কিন্তু যদি গণতন্ত্রের একটি স্তম্ভ ব্যর্থ হয়, তাহলে সংবিধানের রক্ষক কি নীরব থাকবে?”
তুষার মেহতা যুক্তি দেন, “শুধু আদালত নয়, নির্বাহী ও আইনসভাও সংবিধান ও মৌলিক অধিকারের রক্ষক। তবে রাজ্যপালের মতো সাংবিধানিক পদাধিকারীর উপর ‘mandamus’ জারি করা হলে তা ক্ষমতার বিভাজনের নীতির পরিপন্থী হবে।” তিনি বলেন, রাজ্যপালরা বিল অনুমোদনে চিরকাল বসে থাকতে পারেন না, তবে তাঁদের কিছু ‘discretionary power’ রয়েছে, যা সংবিধানের ২০০ অনুচ্ছেদে নিহিত।
মেহতা আরও বলেন, “২০০ অনুচ্ছেদে ‘as soon as possible’ শব্দবন্ধ ব্যবহৃত হয়েছে, যার মানে অনির্দিষ্টকাল নয়। বাস্তবে ১৯৭০ সাল থেকে ৯০% বিল এক মাসের মধ্যে অনুমোদন পেয়েছে, মাত্র ২০টি ক্ষেত্রে অনুমোদন withheld হয়েছে”।
এই বিতর্কে আদালত ও নির্বাহীর ক্ষমতা, সংবিধানিক ভারসাম্য এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর মৌলিক নীতিগুলি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় এখন অপেক্ষারত, যা ভবিষ্যতে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির ভূমিকা ও সীমা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
