প্রতিদিন ঘরদোর পরিষ্কার রাখলে শরীর-মন ভাল থাকে—এই ধারণা বহুদিনের। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য, যা সচেতন গৃহস্থদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াতে পারে। গবেষণা বলছে, যাঁরা প্রতিদিন ঘর পরিষ্কার করেন, বিশেষ করে রাসায়নিক ক্লিনার ব্যবহার করে, তাঁদের ফুসফুসের উপর দীর্ঘমেয়াদে এমন প্রভাব পড়ে, যা ২০ বছর ধরে প্রতিদিন একটি প্যাকেট সিগারেট খাওয়ার সমান ক্ষতিকর।
এই গবেষণাটি করেছে নরওয়ের বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয়, এবং তা প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকান জার্নাল অফ রেসপিরেটরি অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন-এ। গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। দীর্ঘ সময় ধরে তাঁদের শ্বাসপ্রশ্বাস ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
গবেষণা অনুযায়ী, নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করা নারী—বিশেষ করে যাঁরা জীবাণুনাশক স্প্রে, ব্লিচ, অ্যামোনিয়া বা অন্যান্য শক্তিশালী ক্লিনিং কেমিক্যাল ব্যবহার করেন—তাঁদের ফুসফুসে প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট এবং অ্যাজমার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। গবেষকদের মতে, এসব রাসায়নিক ধীরে ধীরে ফুসফুসের টিস্যু নষ্ট করে এবং শ্বাসনালিতে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালা সৃষ্টি করে।
গবেষণায় আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই ধরনের প্রভাব পুরুষদের ক্ষেত্রে তেমনভাবে দেখা যায়নি। এর পেছনে কারণ হিসেবে গবেষকরা বলছেন, গৃহস্থালির নিয়মিত পরিচ্ছন্নতার কাজ মূলত নারীরাই বেশি করেন, ফলে তাঁরা এই রাসায়নিকের সংস্পর্শে অনেক বেশি সময় থাকেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত ঘর পরিষ্কারের অভ্যাস বন্ধ করার প্রয়োজন নেই, তবে সচেতনভাবে এবং নিরাপদ উপায়ে তা করা উচিত। তাঁরা পরামর্শ দিচ্ছেন, রাসায়নিক ক্লিনারের পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপাদান যেমন ভিনিগার, বেকিং সোডা, লেবুর রস ব্যবহার করতে। এছাড়াও স্প্রে জাতীয় ক্লিনার ব্যবহার করার সময় মাস্ক পরা এবং জানালা খোলা রাখা অত্যন্ত জরুরি।
শিশু ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীদের রাসায়নিক ক্লিনারের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখার পরামর্শও দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ফলে ঘর ঝকঝকে রাখার পাশাপাশি নিজের শ্বাসযন্ত্রের যত্ন নেওয়াও যে সমান গুরুত্বপূর্ণ, তা আরও একবার প্রমাণ করল এই গবেষণা।
