চলাফেরায় অক্ষম বাবা–মাকে নিয়ে মা*রাত্মক সং*কটে এগারো বছরের জয়ন্তী

চলাফেরায় অক্ষম বাবা-মাকে নিয়ে মাত্র এগারো বছরের এক মেয়ের সংগ্রাম যেন চোখে জল এনে দেয়। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের দমদমা পঞ্চায়েতের রতনমালা এলাকার মালোপাড়ার বাসিন্দা টিজ্ঞা পরিবার আজ সম্পূর্ণভাবে দিশেহারা। সংসারে নেই কোনও উপার্জন, খাবারও জোটে না প্রতিদিন। প্রতিবেশিদের দয়ার ওপর ভরসা করে কোনও রকমে বেঁচে আছে তিন সদস্যের পরিবারটি।

দু’বছর আগে অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজে গিয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন পূর্ণিমা টিজ্ঞা। তারপর থেকেই তিনি হাঁটাচলায় অক্ষম। সংসারের হাল ধরতে গত বছর পুজোর পর হায়দরাবাদে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে গিয়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন স্বামী হরেন টিজ্ঞা। তিনিও আজ চলাফেরায় অক্ষম।

ফলে পুরো সংসারের দায়িত্ব গিয়ে পড়ে তাঁদের মাত্র এগারো বছরের মেয়ে জয়ন্তী টিজ্ঞার কাঁধে। মায়ের চিকিৎসা ও সংসারের কাজ সামলাতে গিয়ে দুই বছর আগে ক্লাস নাইনে পড়ার সময় স্কুল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় সে। যেখানে তার হাতে থাকা উচিত ছিল বই-খাতা, সেখানে আজ তাকে করতে হচ্ছে অসুস্থ বাবা-মায়ের দেখাশোনা ও ঘরের সমস্ত কাজ।

এখন অবস্থা আরও ভয়াবহ। বাড়িতে কেউই উপার্জন করতে না পারায় রান্নার চুলা জ্বালানোর মতো সামান্য চাল-ডালও নেই। প্রতিবেশিরা যেদিন যা দিচ্ছেন, তাই দিয়েই বাবা-মায়ের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছে জয়ন্তী। আর নিজের পেট ভরছে অর্ধাহারে কিংবা শুধু জল খেয়ে।

এই পরিবারের দুর্দশার কথা জানতে পেরে দমদমা পঞ্চায়েত প্রধান লিপিকা সরকার স্বাস্থ্য বিভাগকে নিয়ে তাদের বাড়িতে যান। তিনি টিজ্ঞা পরিবারকে আর্থিক সাহায্যসহ দু’বস্তা চাল দিয়ে আসেন। হরেন টিজ্ঞাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করারও প্রস্তাব দেন। তবে হাসপাতালে দেখাশোনার জন্য পরিবারের কোনও পুরুষ আত্মীয় না থাকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।

পঞ্চায়েত প্রধান বলেন—“আমরা এই অসহায় পরিবারের পাশে আছি। সর্বাত্মক সাহায্য ও সহায়তা করার চেষ্টা চলছে।”

চলাফেরায় অক্ষম এই স্বামী-স্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজের সুহৃদয় ব্যক্তিদের কাছে তাঁদের বাঁচানোর জন্য জরুরি মানবিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।