সল্টলেক স্টেডিয়ামের আশপাশে লিওনেল মেসির সফর ঘিরে যে চরম বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে, তাতে গভীরভাবে মর্মাহত ও বিস্মিত রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। রাজভবন সূত্রে জানানো হয়েছে, পরিকল্পনার সম্পূর্ণ অভাব ও ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার জন্য এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যপালের মতে, গোটা ঘটনার জন্য মূলত দায়ী অনুষ্ঠান আয়োজক ও বেসরকারি স্পনসররা। একই সঙ্গে পুলিশের ভূমিকাকেও তীব্রভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন তিনি। রাজ্যপালের পর্যবেক্ষণ, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা রাজ্য সরকার, সাধারণ মানুষ এবং স্বরাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্বে থাকা মুখ্যমন্ত্রীকেও ব্যর্থ করেছে। ক্রীড়াপ্রেমী কলকাতাবাসীর কাছে এই দিনটি একটি ‘অন্ধকার দিন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারকে একাধিক কড়া নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল। নির্দেশগুলির মধ্যে রয়েছে—
* অনুষ্ঠান আয়োজক ও স্পনসরদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার
* টিকিট কেটে যাঁরা প্রতারিত হয়েছেন, তাঁদের টাকা ফেরত
* স্টেডিয়াম ও অন্যান্য সরকারি সম্পত্তির ক্ষতির জন্য আয়োজকদের উপর জরিমানা
* গোটা ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত
* দায়িত্বে গাফিলতি করা পুলিশ আধিকারিকদের সাসপেনশন
* ভবিষ্যতে বড় জমায়েতের জন্য নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (SOP) চালু
* প্রয়োজনে RAF প্রস্তুত রাখা
* দর্শকদের জন্য বিমা প্রকল্প, যার প্রিমিয়াম দেবে আয়োজক ও স্পনসররা
রাজ্যপাল আরও বলেছেন, মেসির নাম ব্যবহার করে কিছু বেসরকারি স্পনসর সাধারণ মানুষের আবেগকে পণ্য করে দ্রুত মুনাফা লুটেছে। এই ঘটনা রাজ্যের প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই সামনে এনেছে। অভিযোগ, বিশেষ স্বার্থান্বেষী মহলকে সাহায্য করতে পুলিশকেও ব্যবহার করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মেসি-ভক্ত অন্তত দূর থেকে তাঁদের প্রিয় খেলোয়াড়কে দেখার আশায় ভিড় করেছিলেন, অথচ সেই প্রত্যাশা পূরণে প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, করদাতাদের টাকায় তৈরি রাস্তা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল, যা বাংলার ফুটবল-সংস্কৃতির সঙ্গে একেবারেই বেমানান। রাজ্যপাল স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ফুটবলের প্রতি ঐতিহাসিক ভালোবাসার জন্য কলকাতা ‘মেক্কা অফ ফুটবল’ নামে পরিচিত।
উল্লেখ্য, ১২ ডিসেম্বর রাজভবনে বিপুল সংখ্যক অভিযোগ আসার পরই রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছিলেন। টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং সাধারণ মানুষের মেসিকে দেখার সুযোগ না পাওয়া নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রাজ্যপালের বক্তব্য, শুধুমাত্র উচ্চমূল্যের টিকিট কেনা অল্প কিছু মানুষ মেসিকে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। উপরন্তু, ভিড় সামলাতে পুলিশি লাঠিচার্জের ঘটনাও সামনে এসেছে, যা আন্তর্জাতিক তারকার সফরের সঙ্গে একেবারেই মানানসই নয়। শেষ পর্যন্ত রাজ্যপাল রাজ্য সরকারকে আয়োজক ও স্পনসরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সাধারণ মানুষের হয়রানির ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন।
