প্যাকেটে মোড়ানো অবস্থাতেই গাছে ধরে আছে আম। এমন বিদেশী প্রযুক্তি রাজ্যে প্রথম মালদহতে ব্যবহার করা হয়েছে। জেলা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তর পরীক্ষামূলকভাবে বিশেষ প্যাকেট ব্যবহার করে গাছেই আম ফলনের উদ্যোগ নিয়েছে। প্যাকেটে মোড়ানো অবস্থাতেই গাছে আম যেমন বড় হবে। তেমনই পাকবে। এই আধুনিক পদ্ধতিতে আম চাষ করলে একদিকে যেমন আমের গুণগতমান বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি বিভিন্ন কীট পতঙ্গের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে আম। এতদিন মালদহ এই প্রযুক্তির ব্যবহার হয়নি। ফলে চাহিদা থাকলেও গুণগতমান ভালো না থাকায় বিদেশে বাজারে কদর কমে যা্চ্ছিল মালদহের আম। তাই এই বছর পরীক্ষামূলক ভাবে মালদার আমবাগান গুলিতেও আমের প্যাকেটিং করা হচ্ছে। এই বছর প্রথম ইংরেজবাজার ব্লকের কমলাবাড়ী এলাকায় একটি বাগানে আমের প্যাকেটিং করা হচ্ছে। এই বছর মূলত হিমসাগর, মল্লিকা ও আম্রপালি আমের এই বিশেষ প্যাকেটিং করা হচ্ছে। সাফল্য পেলে আগামীতে অন্যান্য কৃষকদের মধ্যেও এই আধুনিক পদ্ধতির প্রচার ও প্রচার করার পরিকল্পনা রয়েছে জেলা উদ্যান পালন দপ্তরের। মালদা উদ্যানপালন দপ্তরের আধিকারিক সামন্ত লায়েক বলেন, এই বছর প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে আধুনিক এই প্যাকেটিং করা হচ্ছে। ছোট অবস্থাতেই প্যাকেটের মধ্যে ঢোকানো হয় আম। এতে করে আমের গুণগতমান রং আকার সমস্ত কিছু ঠিক থাকে।
যা বিদেশে রপ্তানি যোগ্য। এই পদ্ধতিতে আম চাষ করলে খুব সহজেই বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। আশা করছি আমরা সাফল্য পাবো। একসময় বিদেশের বাজারে মালদহের আমের যথেষ্ট সুনাম ছিল। সময়ের সঙ্গে সেই সুনাম এখন তলানিতে। বিগত কয়েক বছর ধরে মালদহের আম বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। ইউরোপিয়ান দেশ গুলিতে মালদহের আমের কোন চাহিদা নেই। বিভিন্ন কারণেই এমনটা হয়েছে। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে, মালদহের আমাকে ফের বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার প্রয়াস শুরু করেছে উদ্যান পালন দপ্তর। তার প্রথম ধাপ হিসাবে জেলা জুড়ে এই মরশুমে কৃষকদের ব্যাপক হারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে উন্নতমানের আম উৎপাদনে। পাশাপাশি আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার প্রয়োগ করা হচ্ছে আম চাষে। তারই অঙ্গ হিসাবে এই বছর রাজ্য তথা মালদহে প্রথম আমি প্যাকেটিং করা হচ্ছে। এই প্যাকেটিং ব্যবস্থার বিদেশে ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। ছোট অবস্থাতে আমের প্যাকেটিং করলে অনেক সুবিধা রয়েছে। বিদেশে আম রপ্তানি করতে হলে যে সমস্ত গুণগতমান দরকার সেগুলি এইভাবে চাষ করলেই সম্ভব।
বিশেষ এক ধরনের কাগজের প্যাকেট দিয়ে আমকে মুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে করে সরাসরি সূর্যের আলো বৃষ্টির জল আমে পড়বে না। আমের রং আকার ঠিক থাকবে। আমের চোকার উপর মোমের মত হালকা আস্তরণ থাকবে। এতে করে বিদেশে চাহিদা বাড়বে। পাশাপাশি প্যাকেট দিয়ে আম মোড়া থাকলে কীটপতঙ্গ বা ফুলি পোকার আক্রমণ হবে না। কৃষকেরা লাভবান হবেন। আম চাষী প্রসূন চিতলাঙ্গিয়া বলেন, মালদহ তথা রাজ্যে আমি প্রথম আমের প্যাকেটিং করছি। এতে করে বিদেশে রপ্তানি যোগ্য আম উৎপাদন সম্ভব হবে। এই বছর পরীক্ষামূলকভাবে অল্প কয়েকটি গাছে করছি। আগামীতে বেশি করে করার পরিকল্পনা রয়েছে। উদ্যানপালক দপ্তর ও মালদহ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের পরামর্শেই তিনি এই বছর এমন আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার করছেন বলেও জানান প্রসূনবাবু । তাঁর লক্ষ্য বিদেশে আম রপ্তানি করা। রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তর বিষয়টি বুঝতে পেরে এগিয়ে আসে। তাতে লাভবান হবে জেলার আম চাষী থেকে আম ব্যবসায়ীরা। চড়া দামে বিক্রী হবে মালদহের আম। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে।