সাইকেলে স্টান্ট দেখিয়ে সকলের মন জয় করলেন গৌরাঙ্গ

একটি পুরনো সাইকেল। নেই ব্রেক, নেই চাকার মার্কেট। কিন্তু তাতেই যেন যাদু দেখালেন গৌরাঙ্গ দাস। জলপাইগুড়ির রাহুতবাগান থেকে প্রায় ৪০ কিমি পথ পেরিয়ে পৌঁছেছেন মেখলিগঞ্জের বাগডোকরা মোড়ে। সেখানকার একটি ছোট পাড়ায় বাচ্চাদের ভিড় দেখেই ছোট মাইক হাতে হাঁক ছাড়লেন, “সার্কার সার্কাস! সার্কাস দেখতে চলে আসুন!” মুহূর্তেই ৮ থেকে ৮০—সব বয়সের প্রায় ৫০ জন মানুষ ভিড় জমালেন। শুরু হলো সাইকেল নিয়ে গৌরাঙ্গের নানা রকম ব্যালান্সিংয়ের খেলা। কখন এক চাকায় সাইকেল চালাচ্ছেন, কখনও আবার চলন্ত সাইকেলে দাঁড়িয়ে পড়ছেন নিজেই।

 চোখের পাতা দিয়ে ব্লেড তোলা, সাইকেলের টায়ার ঘুরিয়ে শরীরের মধ্য দিয়ে পার করে দেওয়া—সবই দেখালেন অনায়াসে।  সব খেলা চলছে ব্রেকহীন সাইকেলেই। প্রতিটি কীর্তিকলাপে দর্শকদের হাততালি আর চমক। খেলা শেষে গৌরাঙ্গের অনুরোধ, “যদি ভালো লেগে থাকে, তবে কুড়ি টাকা করে দিন।” দর্শকরা খুশি মনেই দিলেন—কেউ কুড়ি, কেউ পঞ্চাশ, কেউ আবার একশোও। গৌরাঙ্গ দাস জানালেন, “বছরের ৩৬৫ দিনই এভাবে সাইকেল খেলা দেখিয়ে উপার্জন করি। গত বিশ বাইশ বছর ধরে উত্তরবঙ্গ ও আসামে ঘুরে বেড়াই।

সাধারণত স্কুল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে বাচ্চাদের জন্য খেলাগুলো দেখাই। শিক্ষকদের কাছ থেকে যা পাই, তাই দিয়েই সংসার চলে। তবে গরমের ছুটিতে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরি।”তার আরও বক্তব্য, ‘এই কাজের ঝুঁকি অনেক। কিন্তু ঝুঁকি না নিলে পেট ভরবে না। আমার স্ত্রী ও দুই সন্তানের সংসার চলছে এই জীবনবাজির খেলায়।’ স্থানীয় বাসিন্দা বাপ্পা রায় পাটোয়ারীর চোখে বিস্ময়—“সাইকেলের উপর এত ধরনের ব্যালান্সিং আগে দেখিনি। তাই কুড়ি টাকা চাইলেও খুশি হয়ে একশো টাকা দিলাম।”একদিকে অভাব, অন্যদিকে প্রতিভা—এই দুইয়ের দোলাচলে গৌরাঙ্গ দাসের জীবনযুদ্ধ যেন এক চলন্ত সার্কাস।