আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্যুচিও বা মূল্যবান বিবাহ-বস্ত্রের নির্মাতা গৌরব গুপ্তা ৮ আগস্ট মুম্বইয়ের জিও ওয়ার্ল্ড কনভেনশন সেন্টারে তাঁর ‘ইন্ডিয়ান ক্যুচিও ২০২৫’ কালেকশনের মাধ্যমে ভারতে বিবাহসজ্জার জগতে ঐতিহাসিক আত্মপ্রকাশ করলেন। বিবাহের পবিত্র মুহূর্তকে অবিষ্মরণীয় করে তোলার মতো ওই সম্ভারের নাম রাখা হয়েছে, ‘কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্ট’। ককটেল আওয়ার থেকে শুরু করে জীবনভর একত্রে থাকার অঙ্গীকার হয়ে অভ্যর্থনা পর্ব পর্যন্ত- আধুনিক ভারতীয় বিবাহের নিমগ্ন অন্বেষণের অভিজ্ঞতা সঞ্চারকারী এই উন্মোচন, উদ্বোধনী সন্ধ্যায় পাঁচ শতাধিক অতিথিকে বিয়ের তিনটি আন্তঃ-সংযুক্ত স্থান জুড়ে ফ্যাশন-কাহিনীর নাটকীয় ও আবেগময় যাত্রার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যায়। ‘কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্ট’ কালেকশনের নামটি দুটি চিরকাল সংযুক্ত কণিকার তত্ত্ব থেকে অনুপ্রাণিত। শিভাস লাক্স কালেক্টিভ পারফিউমের মাধ্যমে আধুনিক ভারতীয় বিবাহের এক সাহসী নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে, গৌরব দুই রঙের মিশ্রণ, আলো-ছায়ার প্রতিফলন ও রোমন্থিত অতীতের মতো নিপুণ সূচিকর্মে বিয়ের আচার-অনুষ্ঠানের আবেগময় সাযুজ্যকে এই সংগ্রহের মধ্যে প্রতিফলিত করেছেন।
প্রদর্শনীর সূচনা হয়েছিল গুপ্তার ককটেল এবং অভ্যর্থনা পোশাকের স্বতন্ত্র সম্ভার দিয়ে- যা তিনি প্রায় দুই দশক ধরে বিকশিত করেছেন। কোনও পূর্বানুবৃত্তি নয় বরং বছরের পর বছর ধরে তিনি যে নকশাগুলি তৈরি করেছেন এ তারই এক দূরদর্শী সম্প্রসারণ ছিল। আর্ট নুভো স্থাপত্য এবং হিমবাহের সমতল দ্বারা অনুপ্রাণিত শাড়ি গাউন, ভাস্কর্যযুক্ত লেহেঙ্গা এবং জটিলভাবে নকশা করা গাউনগুলি শুধুই উদযাপনের অনুষঙ্গ হিসেবে নয়, এক স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠার বিবৃতি হিসাবে কল্পনা করা হয়েছিল। রঙের এই ধারাটি নরম ব্লাশ এবং শ্যাম্পেন রঙা সোনালী থেকে শুরু করে গ্রাফাইট, অবসিডিয়ান কালো এবং স্বতন্ত্র বৈদ্যুতিক নীল পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। নিখুঁতভাবে তৈরি করা পোশাকগুলিতে প্রতিটি রঙ আবেগনির্ভর অনুরণনের কথা মাথায় রেখে বেছে নেওয়া হয়েছিল। বেনারসে ২০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে হাতে বোনা ব্রোকেডগুলি ভরিয়ে তোলা হয় স্ফটিকের জাল, হাতে কাটা ফুল, সোনালী জরি এবং প্রাচীন গহনা দ্বারা অনুপ্রাণিত বিশদ নকশার সূচিকর্মে। ফ্রান্সের সঁতিলিতে তৈরি লেসগুলিকে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে রূপদান করা হয়েছিল। আধা-মূল্যবান পাথর, মাদার অব পার্লের খোদাই এবং বুননের চরিত্র মিলিয়ে মন্দিরের মতোই জটিল ওই নকশাগুলি যেন পুনর্জন্মের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত! লেজার-কাট ৩ডি ফুল থেকে শুরু করে হাতে বোনা কর্সেট্রি পাইপিং পর্যন্ত প্রতিটি কৌশল ভারতীয় বয়নশিল্পের দক্ষতা এবং ভবিষ্যৎমুখী উদ্ভাবনের সচেতন সংমিশ্রণকে প্রতিফলিত করে।
পুরুষদের পোশাকে ভাস্কর্যের তীক্ষ্ণতা এবং আনুষ্ঠানিকতার গাম্ভীর্য অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা আধুনিক যুগের বরবেশের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা। ক্লাসিক টাক্সিডো, বন্ধগলা এবং জ্যাকেটগুলিকে সেফটি-পিন এবং হাতে বোনা ল্যাপেলের মতো অপ্রত্যাশিত মোচড়ে পুনর্কল্পিত করা হয়। অবসিডিয়ান, গ্রাফাইট এবং মিডনাইট নেভি রঙে রাঙানো প্রাণীজ-অনুভূতিযুক্ত সূচিকর্ম, গ্রহ-আকৃতির পুঁতি এবং গ্রহর কক্ষপথে ধাতব পিনের অক্ষ তৈরি করা নকশার মাধ্যমে পোশাকগুলিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল মহাজাগতিক অলঙ্করণ- যা পরম্পরাগত গাঢ় রঙের জমিতে একাধারে পৌরাণিক ও ভবিষ্যৎমুখী শক্তির প্রকাশ ঘটায়।
