রাজ্যের ভিআইপি সংস্কৃতিকে এক ধাক্কায় অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিলেন রাজ্যপাল। এদিন ধানধান্য এক্সপ্রেসে সাধারণ যাত্রীর মতো ভ্রমণ করেই কার্যত ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন তিনি। সরকারি নিরাপত্তা-বেষ্টনী, লালবাতি বা বিশেষ ব্যবস্থার বাইরে তাঁকে দেখা গেল সম্পূর্ণ অন্য মেজাজে—একেবারে নিত্যযাত্রীদের ভিড়েই বসে ট্রেন সফর করতে।
ট্রেন ছেড়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই টিকিট চেকার সুকুমার বেরা নিয়ম মেনেই রাজ্যপালের কাছে টিকিট চান। সেই মুহূর্ত ছিল যেন প্রতীকী এক দৃশ্য—রাজ্যপাল সামান্যতম ইতস্তত না করেই নিজের ট্রেনের টিকিট বের করে প্রদর্শন করেন। টিটিই সুকুমার বেরা জানান, “প্রথমে ভাবতে পারিনি উনি রাজ্যের রাজ্যপাল। কিন্তু যখন টিকিট এগিয়ে দিলেন, তখন বুঝলাম। উনি হাসিমুখেই টিকিট দেখালেন, কোনো আড়ম্বর ছিল না। এটা আমাদের পেশার জন্যও গর্বের মুহূর্ত।”
ঘটনার পর রাজ্যপাল নিজেই স্পষ্ট বার্তা দেন। তিনি বলেন, “আমি আজ সাধারণ মানুষের মতো ভ্রমণ করছি। আমি চাই মানুষ আমাকে তাদেরই মতো দেখুক। আমি রাজ্যপাল হলেও একজন নাগরিকও বটে। সাধারণ মানুষের সমস্যা কাছ থেকে বুঝতে চাই।” তাঁর সংযোজন, “এসি কামরা নয়, নিরাপত্তার ভিড় নয়—রাস্তার ধুলো, স্টেশনের শব্দ, যাত্রীদের অভিজ্ঞতা, সাধারণের জীবনের গন্ধ—সবটাই অনুভব করতে চাই। এখান থেকেই কাজের বাস্তব চিত্র বোঝা যায়।”
রাজ্যপালের এমন পদক্ষেপ ঘিরে ট্রেনের সাধারণ যাত্রীদের মধ্যেও উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ে। কামরায় বসা এক কলেজছাত্রী প্রিয়াঙ্কা দাস বলেন, “নিউজে দেখেছি রাজ্যপালদের কনভয়ে চলতে। কিন্তু আজ আমাদের পাশেই বসেছেন, আবার টিকিটও দেখাচ্ছেন টিটিই-কে—এটা সত্যিই ভেবে ওঠা যায় না!”
আরেক প্রবীণ যাত্রী রমেশ মণ্ডল বলেন, “রাজভবনে দূর থেকে দেখা যায় মানুষকে। কিন্তু এখানে তো চোখের সামনে জীবন চলছে। উনি যে এত সহজ থাকতে পারেন, এটা সত্যিই বড় বার্তা।”
