বিশ্বজুড়ে যখন পানীয় জলের সংকট ঘনাচ্ছে, ঠিক তখনই এক আশাব্যঞ্জক তথ্য সামনে আনলেন বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, সমুদ্রের নোনা জলের নিচেই লুকিয়ে রয়েছে বিপুল পরিমাণ মিষ্টি জল— যা ভবিষ্যতে তেষ্টা মেটাতে পারে কোটি কোটি মানুষের।
আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূলে, নিউ জার্সি থেকে মেইন পর্যন্ত আটলান্টিক মহাসাগরের নিচে ছড়িয়ে রয়েছে এই মিষ্টি জলের স্তর। বহুদিন ধরেই বিজ্ঞানীদের মনে এই সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ ছিল, তবে এখন তাঁরা তা নিশ্চিত হয়েছেন।
কীভাবে জানা গেল এই তথ্য?
প্রায় ১২টি দেশের বিজ্ঞানীরা মিলে গবেষণা চালান, যার মধ্যে রয়েছে আমেরিকাও। উপকূল থেকে প্রায় ৩০–৫০ কিলোমিটার গভীরে সমুদ্রে খনন করা হয়। এই প্রকল্পে খরচ হয় প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২২০ কোটি টাকা)। খননের ফলেই আবিষ্কৃত হয় সমুদ্রের নিচে বিশাল মিষ্টি জলের ভাণ্ডার।
গবেষণা অনুযায়ী, এই জল এতটাই বিশাল পরিমাণে রয়েছে যে, নিউ ইয়র্ক শহরের মানুষদের ৮০০ বছরের পানীয় জলের চাহিদা মেটানো সম্ভব! বিজ্ঞানীদের অনুমান, বাস্তবে এর পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
কেন জরুরি এই আবিষ্কার?
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বজুড়ে পানীয় জলের চাহিদা ৪০ শতাংশ বেড়ে যাবে। ইতিমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন সহ বহু শহর পানীয় জলের তীব্র অভাবে ভুগছে। ফলে এই ধরনের জলভাণ্ডার ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
এই জল কি পানযোগ্য?
প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, সমুদ্রের নিচে পাওয়া এই জল পানীয় উপযোগী। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা খতিয়ে দেখছেন, এই জলের উৎস কী, কত বছরের পুরনো এবং এটি রিনিউয়েবল কিনা— অর্থাৎ পুনরায় তৈরি হওয়া সম্ভব কি না।
ভবিষ্যতের দিশা:
প্রায় ৫০ বছর আগে খনিজের খোঁজে শুরু হওয়া এই অনুসন্ধান এখন পানীয় জলের সম্ভাব্য বিকল্প উৎস হয়ে উঠেছে। যদিও এই জল উত্তোলন এখনও চ্যালেঞ্জিং, তবে পানীয় জলের ঘাটতি যেভাবে বাড়ছে, তাতে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, সমুদ্রের নিচের এই জলই একদিন হয়ে উঠতে পারে বিশ্বের তৃষ্ণা মেটানোর অন্যতম উপায়।
