প্রতিটি ব্যক্তির জানা উচিত দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের প্রতিরোধমূলক কৌশল

ডাঃ তরুণ কুমার সাহা হায়দ্রাবাদের যশোদা হাসপাতালের একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট নেফ্রোলজিস্ট এবং ট্রান্সপ্ল্যান্ট ফিজিশিয়ান, বলেছেন, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (CKD) একটি নীরব রোগ কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে এবং ভারতে এই রোগ আরও বেশি প্রচলিত হচ্ছে। এই রোগে কিডনির কার্যকারিতা ধীরগতিতে হ্রাস পায়। সিকেডি সাধারণত শেষ পর্যায়ে আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তাই প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় পরিবারগুলি সিকেডি-এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে সঠিকভাবে বুঝতে পারলে এর প্রভাব হ্রাস করা সম্ভব।

প্রতিরক্ষার প্রথম লাইন হল প্রতিরোধ। এর মধ্যে CKD-এর বিকাশের দিকে পরিচালিত করে এমন জীবনযাত্রার ঝুঁকির কারণগুলির পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত। ভারতে, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের প্রধান কারণ। উপযুক্ত রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখা পরিবারের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।  নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ক্ষতিকারক চর্বি এবং লবণ কম থাকা সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে এটি অর্জন করা যেতে পারে। ধূমপান থেকে বিরত থাকা এবং পরিমিত পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণের মাধ্যমে ঝুঁকি আরও হ্রাস পায়। স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা এবং প্রচুর ফল ও শাকসবজি খাওয়ারও প্রতিরোধমূলক প্রভাব রয়েছে।

প্রাথমিক সনাক্তকরণ হল প্রতিরোধের দ্বিতীয় উপায়। ডাঃ তরুণ কুমার সাহা ব্যাখ্যা করেন,  বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অথবা কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস যাদের আছে তাদের জন্য এই উপায় জরুরি। রক্ত ​​ও প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির কার্যকারিতা এবং প্রোটিন লিকেজের (অ্যালবুমিনুরিয়া) জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং দ্বারা সময়মতো রোগ নির্ণয় সম্ভব। স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য শিবির বা ক্লিনিকে গিয়ে  স্ক্রিনিং করানো ভারতে এই রোগে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে রোগ প্রতিরোধের একটি বুদ্ধিমান উপায়। প্রাথমিক অবস্থায় সিকেডি ধরা পড়লে এর গতি ধীর করা যেতে পারে এবং পরিণতি এড়ানো যেতে পারে।

প্রতিরোধের আরেকটি লক্ষ্য হল বর্তমানে রোগ নির্ণয় করা ব্যক্তিদের মধ্যে সিকেডি-এর অগ্রগতি হ্রাস করা। এর মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো অন্তর্নিহিত রোগকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, সেজন্য চিকিৎসা পেশাদারের নির্দেশ অনুসারে সঠিক ওষুধ গ্রহণ জরুরি। অ্যাঞ্জিওটেনসিন রিসেপ্টর ব্লকার (ARBs) অথবা অ্যাঞ্জিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম ইনহিবিটর (ACE ইনহিবিটর) এর মতো ওষুধ ব্যবহার করে কিডনির কার্যকারিতা সংরক্ষণ করা যেতে পারে। Sgl2 ইনহিবিটর গ্রুপের ওষুধ যেমন ড্যাপাগ্লিফ্লোজিন, এমপাগ্লিফ্লোজিন বা glp1 অ্যাগোনিস্ট যেমন সেমাগ্লুটাইড এবং ns – এমআরএ গ্রুপের ওষুধ যেমন ফিনেরেনোন যা কিডনির কার্যকারিতা রক্ষা করে। কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং কিডনি খারাপ হওয়ার অগ্রগতি রোধে খাদ্যতালিকায় লবণের পরিমাণ সীমিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিডনির রোগ বৃদ্ধি এবং এর জটিলতা রোধে উচ্চ প্রোটিন এবং ফসফেট গ্রহণ এড়ানোও অপরিহার্য। অবাঞ্ছিত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ, দেশীয় ওষুধ এবং ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ (ব্যথানাশক) এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এর মধ্যে কিছু উপাদান থাকতে পারে, যা বিভিন্ন কিডনি রোগের কারণ হতে পারে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে, অনুগ্রহ করে [০৮০৬৫৯০৬১১৪ / ০৮০৬৫৯০৬১৭৯] নম্বরে কল করুন অথবা –https://www.yashodahospitals.com/ এ অনলাইন বুক করুন।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার কথা প্রচারের জন্য সম্প্রদায়ের সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।  সিকেডি-এর ঝুঁকির কারণ, লক্ষণের মধ্যে পা ও মুখ ফুলে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, রাতে বেশি পরিমাণে প্রস্রাব (নকটুরিয়া) এবং ফেনাযুক্ত প্রস্রাব এবং প্রাথমিক পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানা উচিত। সেজন্য মিডিয়া, আশেপাশের স্বাস্থ্য পেশাদারদের  দ্বারা স্বাস্থ্য শিবিরের পাশাপাশি বিশ্ব কিডনি দিবসের মতো অনুষ্ঠানের আরও বেশি করে আয়োজন করা দরকার। দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য পরিবারগুলিকে কিডনি-বান্ধব জীবনধারা বেছে নিতে হবে, যা সমগ্র ভারত জুড়ে সিকেডি-এর প্রকোপ কমিয়ে আনবে।

সংক্ষেপে, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (CKD) প্রতিরোধের জন্য একটি বহুমুখী কৌশল প্রয়োজন যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ, বিশেষ করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য প্রাথমিক স্ক্রিনিং, এবং নিশ্চিত কেসের ক্ষেত্রে দক্ষ চিকিৎসা। ভারতীয় পরিবারগুলিকে কিডনির স্বাস্থ্যকে সামগ্রিক সুস্থতা রক্ষার একটি অপরিহার্য উপাদান হিসাবে দেখা উচিত। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কিডনির কার্যকারিতা এবং জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে ভালো জীবনধারা বেছে নেওয়া এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার। ডাঃ তরুণ কুমার সাহা হায়দ্রাবাদের যশোদা হাসপাতালের একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট নেফ্রোলজিস্ট এবং ট্রান্সপ্ল্যান্ট ফিজিশিয়ান। তিনি বিশেষ পরামর্শ এবং যত্ন প্রদানের জন্য এই মাসে ২৫ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আমাদের কেন্দ্রে উপস্থিত থাকবেন।  অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে, অনুগ্রহ করে [০৮০৬৫৯০৬১১৪ / ০৮০৬৫৯০৬১৭৯] নম্বরে কল করুন অথবা অনলাইনে বুক করুন – https://www.yashodahospitals.com/