অসমের বিদেশি ট্রাইব্যুনালের রায়ে ক্ষুব্ধ মমতা, বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ

পশ্চিমবঙ্গের এক বাসিন্দাকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ আখ্যা দিয়ে অসমের বিদেশি ট্রাইব্যুনাল তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনাকে ঘিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, “এই ঘটনার মাধ্যমে বিজেপি আবারও প্রমাণ করল যে, তারা বাঙালিদের অপমান করতে চায়। এটা শুধু অসম নয়, গোটা দেশের গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।”

বিচারাধীন ব্যক্তি উত্তর দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা শৈবাল সরকার। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসমে কর্মরত ছিলেন এবং তাঁর আধার, ভোটার কার্ড ও অন্যান্য নথি থাকা সত্ত্বেও ট্রাইব্যুনাল তাঁকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ বলে চিহ্নিত করে। ওই রায়ে বলা হয়, তিনি ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশ থেকে অসমে প্রবেশ করেছেন, যদিও তাঁর পরিবার পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা বলে পরিচয়পত্রে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।

ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে আজ বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেস তীব্র প্রতিবাদ জানায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও উদ্বেগজনক। একজন ভারতীয় নাগরিক, যাঁর বাড়ি বাংলায়, তাঁকে বিদেশি বলা হচ্ছে! বিজেপি ও তাদের চালিত প্রশাসন এভাবেই বিভাজনের রাজনীতি করছে। আমরা এই ঘটনার বিরুদ্ধে আইনি ও সাংবিধানিক পথে লড়ব।”

তিনি আরও বলেন, “বাঙালি হওয়াটাই কি আজ অপরাধ? এটা কি বিজেপির ভারতবর্ষ যেখানে নাগরিকদের জাতি ও ভাষার ভিত্তিতে বেছে নেওয়া হবে?”

এই প্রসঙ্গে বিরোধী দলগুলি যেমন কংগ্রেস ও সিপিএম মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছে, তেমনই বিজেপি নেতারা বিষয়টি নিয়ে এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে অসম বিজেপির একটি সূত্র জানিয়েছে, “ট্রাইব্যুনাল স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান, তাদের রায় নিয়ে রাজনীতি করা অনুচিত।”

আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, নাগরিকত্ব সংক্রান্ত এমন রায় শুধুমাত্র নথির অভাব বা প্রশাসনিক ত্রুটির উপর নির্ভর করে দেওয়া হলে তা গভীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমান। বিষয়টি এখন উচ্চতর আদালতে আপিলের অপেক্ষায় রয়েছে।

এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন পশ্চিমবঙ্গের বহু বাসিন্দা ও নাগরিক সমাজ। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এনআরসি ও সিটিজেনশিপ আইনের নামে ভবিষ্যতে আরও এমন হয়রানি কি অপেক্ষা করে আছে?