ট্রমা ও শিশু গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজির ক্ষেত্রে এক বিরল সাফল্য অর্জন করলো মণিপাল হসপিটালস | ইএম বাইপাস ও মুকুন্দপুর ক্লাস্টারের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের পরিচালক ডা. প্রদীপ্ত কুমার শেট্টি তাঁর দক্ষ চিকিৎসার মাধ্যমে এক ছোট শিশুর প্রাণ রক্ষা করলেন, যে বাড়িতে এক গুরুতর অগ্ন্যাশয়ের আঘাতে আক্রান্ত হয়েছিল। দ্রুত সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাই এই শিশুর জীবনে নতুন আশার আলো হয়ে উঠেছে। শিশুটি, দীপ অধিকারী (নাম পরিবর্তিত), বয়স সাত বছর, কোলাঘাট, পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা ও প্রথম শ্রেণির ছাত্র। বাড়িতে খেলতে গিয়ে সে একটি ধাতব বইয়ের আলমারিতে চড়তে চেষ্টা করলে আলমারিটি ভেঙে তার বুক ও পেটে পড়ে যায়। গুরুতর আঘাত পেয়ে প্রথমে তাকে স্থানীয় এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক পরীক্ষায় যকৃতের আঘাতের ইঙ্গিত মেলে, যা এমন দুর্ঘটনায় সাধারণত দেখা যায়। তবে অবস্থার জটিলতার কারণে তাকে দ্রুত মণিপাল হাসপাতাল মুকুন্দপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে উন্নত পরীক্ষার পর দেখা যায় যে সমস্যা আরও জটিল। সিটি স্ক্যান ও এমআরসিপি পরীক্ষায় অগ্ন্যাশয়ে গুরুতর আঘাত ধরা পড়ে এবং অগ্ন্যাশয়ের নালী সম্পূর্ণ ছিঁড়ে যায়। ফলে অগ্ন্যাশয় থেকে বের হওয়া রস অন্ত্রে না গিয়ে পেটে জমতে থাকে, যা ভীষণ বিপজ্জনক এবং প্রাণঘাতী সংক্রমণ ও অঙ্গ ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি করে।পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে চিকিৎসক দল বিষয়টি ডা. প্রদীপ্ত কুমার শেট্টির কাছে পাঠানো হয় । তিনি ইআরসিপি (এন্ডোস্কোপিক রেট্রোগ্রেড কোলাঞ্জিওপ্যানক্রিয়াটোগ্রাফি) করে নালীতে স্টেন্ট বসানোর সিদ্ধান্ত নেন। এটি অত্যন্ত জটিল হলেও তুলনামূলক কম কাটা-ছেঁড়ার মাধ্যমে করা যায়। শিশুটিকে মণিপাল হাসপাতাল মুকুন্দপুরের শিশু আইসিইউতে ভর্তি করা হয় এবং ডা. প্রশান্ত দেবনাথ, ডা. রাহুল সামন্ত ও ডা. পি কুমার এই কাজে সাহায্য করেন ।
ডা. প্রদীপ্ত কুমার শেট্টি জানান, “শিশুদের অগ্ন্যাশয়ের নালী ছিঁড়ে যাওয়া অত্যন্ত বিরল। অস্ত্রোপচার করলে অবস্থা খারাপ হতে পারে, আর শুধু ওষুধে রাখলে প্রাণঘাতী জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই ইআরসিপি করে স্টেন্ট বসানোই একমাত্র উপায় ছিল। প্রক্রিয়াটি খুব কঠিন হলেও এটাই শিশুটিকে বাঁচানোর সবচেয়ে ভালো সুযোগ ছিল। স্টেন্টের মাধ্যমে অগ্ন্যাশয়ের রস আবার অন্ত্রে যাওয়া শুরু করে।” অপারেশনের পর শিশুটি শিশু আইসিইউতে ভর্তি থাকে। ডা. সৌমেন মিউর (এইচওডি ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট – পেডিয়াট্রিক্স) এবং ডা.মনিদীপা দত্ত (কনসালট্যান্ট – পেডিয়াট্রিক্স) তাঁর যত্ন নেন। তবে শিশুর পেট ফুলে ওঠায় ডা. পার্থ প্রতীম সামুই, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও ইন্টারভেনশনাল রেডিওলজির ইন-চার্জ, একটি পিগটেল ক্যাথেটার বসান, যা থেকে প্রায় আটশো মিলিলিটার তরল বের হয় এবং শিশুর স্বস্তি মেলে।
