ব্যস্ত শহুরে জীবনে ফাস্ট ফুড এবং ভাজাভুজি খাওয়ার প্রবণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লিভারের উপর বাড়ছে অতিরিক্ত চাপ। এর ফলেই দিন দিন বেড়ে চলেছে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা। চিকিৎসকদের মতে, সময়মতো সতর্ক না হলে এই সমস্যাই ভবিষ্যতে ডেকে আনতে পারে লিভার সিরোসিস বা এমনকি ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগ।
তবে সাম্প্রতিক একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এই সমস্যার মোকাবিলায় নতুন দিশা দেখাচ্ছে। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান দিয়েগো স্কুল অফ মেডিসিন-এর গবেষকরা একটি পরীক্ষামূলক ওষুধ তৈরি করেছেন, যা ফ্যাটি লিভারের জটিল পর্যায় ‘মেটাবলিক ডিসফাংশন অ্যাসোসিয়েটেড স্টেটোহেপাটাইটিস’ বা সংক্ষেপে ‘মাশ’-এর বিরুদ্ধে কার্যকর বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা।
‘দ্য ল্যানসেট’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী, ওষুধটির নাম ‘আইওএন২২৪’। এটি যকৃতের ডিজিএটি২ (DGAT2) নামক একটি উৎসেচকের ক্ষরণে বাধা সৃষ্টি করে, যা লিভারে অতিরিক্ত মেদ জমা ও প্রদাহের জন্য দায়ী। উৎসেচকের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে যকৃতে মেদ জমার হার হ্রাস পায় এবং প্রদাহ কমে।
গবেষক ডঃ রোহিত লুম্বা জানান, “এই ওষুধ ডিজিএটি২-এর কার্যক্ষমতা রোধ করে মূলত রোগ সৃষ্টির প্রক্রিয়াতেই হস্তক্ষেপ করছে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।”
ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। আমেরিকার বিভিন্ন গবেষণাগারে ১৬০ জন মাশ-আক্রান্ত রোগীর উপর প্রায় এক বছর ধরে এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে। দেখা গেছে, সর্বোচ্চ মাত্রায় ডোজ প্রয়োগে প্রায় ৬০ শতাংশ রোগীর লিভারের স্বাস্থ্য উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, রোগীর ওজন যাই হোক না কেন, ওষুধটি একই রকমভাবে কাজ করেছে।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, ওষুধটির কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, এবং ভবিষ্যতে এটি অন্যান্য চিকিৎসার পাশাপাশি ব্যবহারযোগ্য হতে পারে। ডঃ লুম্বা আরও বলেন, “তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে আমাদের ফলাফল যদি আরও একবার প্রমাণিত হয়, তবে রোগীদের জন্য একটি নিরাপদ ও কার্যকর চিকিৎসার পথ খুলে যাবে।”
ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসায় এই নতুন পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটি একটি যুগান্তকারী সাফল্য হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
