শিলিগুড়ির বিড়লা ফার্টিলিটি ও আইভএফের ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ডঃ শ্রদ্ধা ত্রিপাঠী বিচপুরিয়া দ্বারা স্বীকৃত
তাঁর বয়স ৩০। কেরিয়ারের লক্ষ্য অর্জন, গভীর রাত পর্যন্ত কাজের চাপ এবং চাপ কমাতে মাঝে মধ্যে সিগারেট- এই সব নিয়ে ব্যস্ত আছেন তিনি।তাঁর শরীর বাহ্যত সুস্থ,সবল এবং এখন পরিবার শুরু করার কথা ভাবছেন। কিন্তু বুঝতে পারেননি, যে অভ্যাসটিকে তিনি ক্ষতিকারক বলে ভাবেননি, বরং নিজেকে ভারমুক্ত করার উপায় বলেই মনে করেছিলেন- তা নীরবে তাঁর উর্বরতায় থাবা বসিয়েছে।
তামাক ব্যবহার শুধুই দাঁতে ছোপ ফেলা বা ফুসফুসের ক্ষতি করে না – এটি সরাসরি জীবন তৈরির জন্য দায়ী কোষগুলিকে প্রভাবিত করে।
কম শুক্রাণু,কম সম্ভাবনা
একটি পিএমসি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা দিনে ২০টির বেশি সিগারেট খান, তাঁদের শুক্রাণুর ঘনত্ব ১৯% হ্রাস পায়। এমনকি যাঁরা দিনে ১০টিরও কম ধূমপান করেন তাঁদেরও অধূম পায়ীদের তুলনায় শুক্রাণুর সংখ্যা ২৩% কম হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস কেবল সমস্যার সূচনা মাত্র।
তামাক ব্যবহারের ফলে শুক্রাণুর গতিশীলতা, অর্থাৎ তারা কতটা ভালোভাবে সাঁতার কাটতে পারবে – তাও উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবং গঠনগত সমস্যাও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, অর্থাৎ ধূমপান অস্বাভাবিক আকৃতির শুক্রাণুর শতাংশ বৃদ্ধি করে,ডিম্বাণু নিষিক্ত করার ক্ষমতা হ্রাস করে। তাই শুক্রাণুর সংখ্যা ‘স্বাভাবিক’ দেখালেও,তাদের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকতে পারে।
এ বার আসা যাক ডিএনএ- কথায়। তামাকের ধোঁয়া অক্সিডেটিভস্ট্রেস তৈরি করে শুক্রাণুর ভিতরের জেনেটিক উপাদানের ক্ষতি করে। আরও একটি পিএমসি গবেষণায় দেখা গিয়েছে,ধূমপায়ীদের মধ্যে উচ্চ ডিএনএ ফ্র্যাগমেন্টেশনের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে, যা আইভিএফ-এর সাফল্য হ্রাস করে, ভ্রূণের মান খারাপ করে দিতে পারে এবং এমনকি শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকিরও কারণ হতে পারে।
ধূমপান প্রজনন সংক্রান্ত হরমোনের ভারসাম্যে হস্তক্ষেপ করেটেস্টোস্টেরন, লিউটেইনাইজিং হরমোন (LH) এবং ফলিকল-স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH) -এ পরিবর্তন আনে-যা শুক্রাণু উৎপাদন এবং বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধূমপান রক্তনালী গুলিকে সংকুচিত করে এবং এর ফলে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়ে লিঙ্গ-দৃঢ়তায় সমস্যা বাইরেক্টাইলডিসফাংশনের সম্ভাবনা বাড়ায়।ফলে, শেষ পর্যন্ত গর্ভধারণের ক্ষমতা হ্রাস করে। ধূমপান শুক্রাণুর স্থিতিশীলতা এবং কার্যকলাপের জন্য অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান সেমিনাল জিঙ্কের পরিমাণও হ্রাস করে।
এবং ধূমপানের এই ক্ষতিকর প্রভাব শুধুমাত্র ধূমপায়ীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।দেখা গিয়েছে, মা যদি গর্ভাবস্থায় ধূমপান করে থাকেন তা হলে গর্ভে থাকা পুত্রসন্তানরাও সেই সিগারেটের ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসে ও তার ফলে সে যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন তাদের শরীরে শুক্রাণুর ঘনত্ব ২০-৪৮% কমে যায় বলে প্রমাণ হয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব এ ভাবেই পড়তে থাকে।
কিন্তু একটা ভালো খবরও আছে।
প্রতি ৭৪ দিনে শুক্রাণুর পুনরুৎপাদন হয়। ধূমপান ত্যাগ করলে, কখনও কখনও মাত্র তিন মাসের মধ্যেই শুক্রাণুর গুণমান,গতিশীলতা এবং ডিএনএ অখণ্ডতার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হতে পারে। আপনি যখন গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন, তখন প্রতিটি পদক্ষেপই গুরুত্বপূর্ণ। এবং যখন শুক্রাণুর স্বাস্থ্যের কথা আসে, তখন তামাকের যে কোনও ব্যবহারই ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।