প্রাচীন ঐতিহ্য ও রহস্যে মোড়া জলপাইগুড়ি গোশালা মোড়ের দেবী চৌধুরানী শ্মশান কালী মন্দিরে সকাল থেকেই শুরু হয়েছে শ্যামা পুজোর প্রস্তুতি। মন্দিরের পুরোহিতরা ব্যস্ত মা’কে অলংকারে সজ্জিত করতে। ইতিমধ্যেই ভিড় জমতে শুরু করেছে ভক্তদের, শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন ‘শ্মশান কালী’ মায়ের দর্শনে।
দিনের আলোয়ও যেন গা ছমছমে পরিবেশ। সন্ধ্যা নামতেই নিঝুম হয়ে যায় চারদিক। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে রুকুরা নদী, তার লাগোয়া ঘন জঙ্গল আর শ্মশান ঘেরা পরিবেশে দাঁড়িয়ে এই মন্দির আজও বহন করে শতাব্দী প্রাচীন তান্ত্রিক সাধনার ইতিহাস। এই মন্দিরে দেবীর হাতে নেই কোনও অস্ত্র — এক হাতে রক্তমাখা নরমুণ্ড, অন্য হাতে পাত্র। প্রাচীন রীতি অনুযায়ী এখনও এখানে শোল ও বোয়াল মাছ দিয়ে আমিষ ভোগ নিবেদন করা হয়।
লোককথা অনুযায়ী, এই নদীপথ দিয়েই নৌকায় চেপে আসতেন দেবী চৌধুরাণী। আগে বটগাছের নীচে পুজো শুরু হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। মন্দির কমিটির দাবি — মন্দির চত্বরের বিশালাকার বটগাছটি ইংল্যান্ডের উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের দ্বারা পরীক্ষার ভিত্তিতে জানা গিয়েছে, তার বয়স চারশো বছরেরও বেশি। সেই কারনেই এই মন্দিরকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
পুজোর আগেই ইতিমধ্যেই সরগরম হয়ে উঠেছে অঞ্চল। বহু পর্যটক এসেছেন ইতিহাস জানতে, তান্ত্রিকরা পৌঁছে গিয়েছেন সাধনার জন্য। আগামী কৌশিকী অমাবস্যাকে কেন্দ্র করে মন্দিরে আরও বাড়বে ভক্তদের ঢল — এমনই আশা মন্দির কমিটির।
মন্দিরের পুরোহিত সুভাষ চৌধুরী বলেন, “এখানে মা হলেন শ্মশান কালী। আজও তাঁর পুজো হয় তন্ত্র মতে। শোল-বোয়াল মাছ ছাড়া এই পুজো অসম্পূর্ণ।”
মন্দির কমিটির সম্পাদক দেবাশিস সরকার জানান, “এই মন্দির দেবী চৌধুরাণীর পথ ও সাধনার সাথে সরাসরি যুক্ত। আজও এই মন্দিরে আসলে ইতিহাসের স্রোতে ফিরে যাওয়ার অনুভূতি হয়।”
