বিশ্বখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট এবং হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ড. দিমিত্রি ইয়ারানভ সম্প্রতি একটি ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে মদ্যপানের ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। ভিডিওটিতে তিনি বলেন, অ্যালকোহলের দীর্ঘমেয়াদি সেবন হৃদপিণ্ডের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে এবং ধীরে ধীরে এর গঠন ও কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
তিনি জানান, নিয়মিত মদ্যপানের ফলে অন্তত পাঁচটি গুরুতর হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো অ্যালকোহলিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি। এই অবস্থায় হৃদপিণ্ডের পেশিগুলি মোটা, শক্ত বা বড় হয়ে যায়, ফলে তা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমে যায়। ড. ইয়ারানভের মতে, প্রতি তিনজন নিয়মিত মদ্যপানকারীর মধ্যে একজন এই রোগে আক্রান্ত হন।
দ্বিতীয় সমস্যা হলো অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন (AFib)—হৃদপিণ্ডের উপরের প্রকোষ্ঠগুলির অনিয়মিত ও দ্রুত স্পন্দন। এই সমস্যা স্ট্রোকের সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, AFib আক্রান্ত প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের রয়েছে মদ্যপানের ইতিহাস।
তৃতীয়ভাবে, অ্যালকোহল রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা হৃদপিণ্ডের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। প্রতিটি পেগ অ্যালকোহল রক্তচাপ গড়ে ২ থেকে ৪ mmHg পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এই অতিরিক্ত চাপ হৃদপিণ্ডের ক্ষয় ডেকে আনে।
চতুর্থ ক্ষতি হিসেবে ড. ইয়ারানভ উল্লেখ করেন, দিনে তিনটির বেশি পানীয় সেবনের ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত অ্যালকোহল রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা কমিয়ে দেয় এবং রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে।
সবশেষে, দীর্ঘস্থায়ী মদ্যপান করোনারি ধমনী রোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ করে, যা হার্ট অ্যাটাক এবং দীর্ঘমেয়াদী কার্ডিওভাসকুলার জটিলতার প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত। এটি এমন এক অবস্থা, যা অনেক সময় পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই মারাত্মক আকার নিতে পারে।
ড. ইয়ারানভের সতর্কবার্তা সমর্থন করেছে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন-ও। সংস্থাটি বলেছে, হৃদ্স্বাস্থ্য রক্ষায় অ্যালকোহল সেবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, এবং সুস্থ জীবনযাত্রার জন্য এর ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালকোহলের প্রভাবকে হালকাভাবে না দেখে, হৃদ্রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা ও জীবনধারায় পরিবর্তন আনাই এখন জরুরি। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি, অ্যালকোহল সেবনে সংযমই হতে পারে হৃদপিণ্ড সুরক্ষার অন্যতম উপায়।
