অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ঋতুরাজের মানবিক নজির

ছোট্ট বয়সে বড় স্বপ্ন ও মানবিক ভাবনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করল তুফানগঞ্জের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ঋতুরাজ মন্ডল। নিজের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে সমাজের ছোট ছোট শিশুদের হাতে তুলে দিয়েছে বই, খাতা, কলম, আর্ট সরঞ্জাম, খেলনা ও আরও অনেক কিছু। যেটা দেওয়ার কথা ছিল প্রশাসনের, তা নিজের সামান্য সঞ্চয় থেকেই করে দেখিয়েছে এই কিশোর।

ঋতুরাজ তুফানগঞ্জ নৃপেন্দ্র নারায়ণ মেমোরিয়াল হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। বাবা মানিক মন্ডল টোটো চালক, মা প্রতিমা মন্ডল আমবাড়ি ২০৪ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কর্মী। সুকান্ত পল্লীতে ভাড়া থাকে পরিবারটি।

মায়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গিয়ে দেখে খুদে পড়ুয়ারা শুধু খিচুড়ি ও ডিম নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়— পড়াশোনার কোনও পরিবেশ নেই। নেই বই, খাতা, পেন্সিল, বসার জায়গাও নেই। সেখান থেকেই জন্ম নেয় মানবিক ভাবনা।

নিজের খরচ বাঁচিয়ে একে একে বিভিন্ন শিক্ষাসামগ্রী কিনে, তা তুলে দেয় ওই ছোট্ট শিশুদের হাতে। শুধু তাই নয়, নিজের হাতে বানানো ব্যাটারিচালিত চার চাকা গাড়ি, ট্যাংক, ময়ূর, প্রজাপতি, ডাস্টবিন, ওয়াটার ডিসপেন্সার— সব কিছু দিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে এলাকাবাসীকে।

ঋতুরাজের এই উদ্যোগে খুশি হয়ে তাকে সংবর্ধনা জানায় বারকোদালি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বাবলু বর্মন।

ঋতুর মা প্রতিমা মন্ডল জানান, “আমার সেন্টারে পড়াশোনার কোনো পরিকাঠামো নেই। ছেলের এই কাজ দেখে আমরা গর্বিত ও আপ্লুত।”

স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক রজত কান্তি দেবনাথ বলেন, “এই বয়সে ঋতুরাজ যা করে দেখিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা তার এই কাজ স্কুলের সকল পড়ুয়াদের সামনে তুলে ধরব, যাতে তারা অনুপ্রাণিত হয়।”

তুফানগঞ্জে এই মানবিক আলোর দিশারি ঋতুরাজ—যে আমাদের শেখায়, সমাজ পরিবর্তন বড়দের নয়, ছোটরাও শুরু করতে পারে।