চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের অক্লান্ত পরিষেবা প্রদানে ধনুষ্টংকার আক্রান্ত ব্যাক্তির জীবন বাঁচল

আইজিএম হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের অক্লান্ত পরিষেবা প্রদানের ফলে ধনুষ্টংকার আক্রান্ত ব্যাক্তির জীবন বাঁচল। যমে-মানুষে টানাটানির পর খোয়াই চাম্পাহাওর শিকারীবাড়ি এলাকার বিকাশ দেববর্মা(৩৫) আজ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন। তিনি গত ১২ মে ২০২৫ অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় আগরতলা জিবিপি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলন। তিনি চলাফেরা করতে পারতেন না,কথা বলতে পারতেন না এবং মাথা তুলতেও পারতেন না। এই সমস্যাগুলি নিয়ে তিনি প্রচন্ড অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে এসেছিলেন। এই অবস্থায় হাসপাতালের চিকিৎসকগণ রোগীর চিকিৎসা শুরু করেন। চিকিৎসা শুরুর পর চিকিৎসকরা জানতে পারেন যে কয়েকদিন আগে তার বাম পা কেটে গিয়েছিল। এজন্য তিনি কোনও টিটেনাসের টিকা নেন নি, শুধুমাত্র তখন স্থানীয় দোকান থেকে কিছু ওষুধ গ্রহণ করেছিলেন মাত্র। তাই জিবিপি হাসপাতালের চিকিৎসকরা তখন রোগীর এই ধরনের লক্ষণগুলি পর্যবেক্ষণ করে তার এই সমস্যাটিকে টিটেনাস বলে সন্দেহ করে আইজিএম হাসপাতালে রেফার করে দেন। এরপর তাকে গত ১৫ মে ২০২৫ আইজিএম হাসপাতালে ট্রিসমাস বা চোয়ালের মাসলের স্পাজম,অপিস্টোটোনাস ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালের সিডিসি বিভাগে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ দেবেশ দেববর্মার তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়।

রোগীর প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট ও লক্ষণ দেখে চিকিৎসকগণ তার “টিটেনাস” রোগ সনাক্ত করেন এবং দ্রুত তার চিকিৎসার উদ্যোগ গ্রহণ নেন। চিকিৎসকদের ভাষায় এটি একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যাকে ক্লোস্ট্রেডিয়াম টিটেনি বলা হয়, যা ধনুষ্টংকার রোগ হিসাবে পরিচিত। এই সংক্রমণে রোগীর পেশী শক্ত হয়ে যায়া এবং খিঁচুনি থাকে। এটি সাধারণত মুখের চোয়ালে শুরু হয় এবং তারপর শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়াও অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে গায়ে জ্বর থাকা,ঘাম হওয়া,মাথাব্যথা করা, থাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকা। এক্ষেত্রে এই রোগীরও মুখ বাঁকা হতে থাকে এবং পীঠ ধনুকের মতো বাঁকা হতে থাকে।এই রোগে মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক বেশী। আইজিএম হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ বিভুরঞ্জন দাস, ডাঃ নিতীশ দাস এবং ডাঃ দেবীপ্রিয়া সাহা-র নেতৃত্বে মেডিসিন বিভাগের পিজিটি চিকিৎসক ও নার্সিং অফিসারদের মিলিত প্রচেষ্টায় তার চিকিৎসা শুরু হয়। রোগীকে একটি অন্ধকার আলোহীন ঘরে রেখে চিকিৎসা শুরু করেন। তারপর আস্তে আস্তে সে চিকিৎসকদের চিকিৎসায় সাড়া দিতে থাকেন এবং প্রায় দুই দিনের মাথায় তিনি হাঁটতে শুরু করেন।

আইজিএম হাসপাতালের মেডিসিন,ফিজিওথেরাপি ইউনিট,নার্সিং স্টাফদের পর্যায়ক্রমে অক্লান্ত চিকিৎসা পরিষেবা ও সবরকম সাহায্য সহযোগিতায় দ্রুততার সাথে রোগী এই অতি মারাত্মক টিটেনাস রোগকে জয় করেন। আইজিএম হাসপাতালেই রোগীকে ফিজিওথেরাপি করানো হয় এবং ফিজিওথেরাপির কৌশলগুলি দেখিয়ে দেওয়া হয়। অবশেষে আজ টিটেনাস বা ধনুষ্টংকার মুক্ত হয়ে বিকাশ দেববর্মা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন। উল্লেখ্য এক সময় এই রোগে আক্রান্ত শিশু থেকে বয়ষ্ক বহু মানুষের প্রাণ ঝরেছে। উল্লেখ্য বহুদিন পর এবার টিটেনাস আক্রান্ত রোগী রাজ্যে সনাক্ত হল। মূলত টিটেনাসের টিকা গ্রহণ না করার ফলেই এই রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে। এই ধরনের মারণরোগে আক্রান্ত হবার পরে ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্যকর্মীরা যে ভাবে রোগীর চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন তাতে রোগীর পরিবার পরিজনেরা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।