‘ধ্বংসের মধ্যেই সৃষ্টির বীজ’— কালীপুজো উপলক্ষ্যে মা কালীর বহুরূপে ব্যাখ্যা করলেন সাধক শান্তনু পাল

আসন্ন কালীপুজো ঘিরে যখন সমগ্র বাংলা জুড়ে উৎসবের আবহ, তখনই শিলিগুড়ির প্রখ্যাত তান্ত্রিক সাধক শান্তনু পাল মা কালীর আরাধনা, রূপ ও দর্শন নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। তিনার ভাষায়, “মা কালী ভয়ঙ্কর নন, তিনি চেতনার জাগরণ। ধ্বংসের মধ্যেই তিনি নতুন সৃষ্টি আনেন।”

সাধক শান্তনু পাল বলেন, কালীপুজোর মূল উদ্দেশ্য অন্ধকারের বিনাশ ও আলোর আহ্বান। দীপাবলির অমাবস্যা রাতে, যখন চারিদিকে অন্ধকার, তখনই মা কালী প্রকাশিত হন সময়ের অন্তরাল থেকে — ভক্তের অন্তরজগতে আলো জ্বালাতে।
“এই পুজো শুধুই ধর্মীয় আচার নয়, এটি আত্মশুদ্ধির যাত্রা,” এমনটাই তিনার মন্তব্য।

সাধক জানান, মা কালী-র অসংখ্য রূপ রয়েছে, যার প্রত্যেকটির রয়েছে বিশেষ আধ্যাত্মিক অর্থ ও শক্তির প্রতীকত্ব। তিনি ব্যাখ্যা করেন
সিদ্ধকালী — সাধনার সিদ্ধি দানকারী দেবী। গুহ্যকালী — গুপ্ততন্ত্রের অধিষ্ঠাত্রী, যিনি ভক্তকে অন্তর্দৃষ্টি দেন। ভদ্রকালী — শান্তি, স্নেহ ও মঙ্গলময় রূপে গৃহে সুখ আনেন। চামুণ্ডাকালী — চণ্ড-মুণ্ড বিনাশিনী, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের প্রতীক। শ্মশানকালী — মৃত্যুর ভয় জয় করতে সাহায্য করেন, জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব স্মরণ করান।মহাকালী — সময়, সৃষ্টি ও প্রলয়ের নিয়ন্ত্রক; যিনি বিশ্বচক্রের অন্তর্গত শক্তি। রক্ষাকালী — ভক্তের সর্বপ্রকার বিপদে রক্ষা করেন। কামকলাকালী — প্রেম, শক্তি ও সৃষ্টিশক্তির দেবী, যিনি সংসারে ঐশ্বর্য ও সৃষ্টির আনন্দ আনেন।

তিনির কথায়, “প্রতিটি রূপ ভিন্ন ভিন্ন জীবনদর্শন শেখায়। কখনও ভয় জয় করার শক্তি, কখনও প্রেমে আত্মসমর্পণের শিক্ষা।”

সাধক আরও বলেন, কালীপুজো মানে কেবল প্রদীপ জ্বালানো না বরং নিজের ভেতরের অন্ধকার, অহংকার ও লালসাকে ত্যাগ করে দেওয়া। “মায়ের করুণা পেতে হলে ভয়কে জয় করতে হবে, নিজের মনের ভিতরে আলো জ্বালাতে হবে,” — মন্তব্য সাধক শান্তনু পালের।

তিনি এও জানান, শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় এখন থেকেই কালীপুজোর প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। শহরের শ্মশানকালী মন্দির, মহাকালীতলা, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির সহ বিভিন্ন পুজোমণ্ডপে চলছে মূর্তি গড়ার শেষ মুহূর্তের কাজ।

শেষে সাধক শান্তনু পাল বলেন, “কালী মানে কাল, আর কাল মানেই সময়। সময়ই সবচেয়ে বড় শক্তি — আর মা কালী সেই সময়েরই রূপ, যিনি ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি শেখান।”