বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস – বৈজ্ঞানিক পুষ্টির মাধ্যমে ডায়াবেটিস পরিচর্যার অগ্রগতি

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে কলকাতায় আয়োজিত একটি বৈজ্ঞানিক গোলটেবিল বৈঠকে দেশের শীর্ষস্থানীয় এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট এবং পুষ্টিবিদরা অংশ নেন। আলোচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল—প্রমাণভিত্তিক পুষ্টির ভূমিকা তুলে ধরা এবং ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা থেকে পরিমাপযোগ্য অগ্রগতি নিশ্চিত করা। ভারতে বর্তমানে ১০ কোটি ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। চিকিৎসার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে সফল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পুষ্টি ও জীবনধারার গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে। গবেষণা জানায়, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রতি চারজনে তিনজনই গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ব্যর্থ হন—যার পেছনে রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, জিনগত কারণ এবং নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন। কেন্দ্রীয় স্থূলতাও এই চ্যালেঞ্জ আরও বাড়ায়, ফলে রক্তে শর্করার ওঠানামা এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

লিলাবতী হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ও ডায়াবেটোলজিস্ট এবং ইন্ডিয়ান একাডেমি অব ডায়াবেটিস-এর সভাপতি ড. প্রফ. শশাঙ্ক জোশি বলেন, “ডায়াবেটিস চিকিৎসা তখনই সবচেয়ে সফল হয় যখন আমরা একধরনের কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতির বাইরে এসে ব্যক্তিকেন্দ্রিক পুষ্টি পরিকল্পনা করি। আজকের মূল লক্ষ্য হলো—ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ানো এবং বৈজ্ঞানিক খাদ্য ও জীবনধারার মাধ্যমে রক্তশর্করা স্থিতিশীল রাখা। রোগীরা যখন এগুলো বুঝতে পারেন, ডায়াবেটিস তখন রোগ নয়—বরং ব্যবস্থাপনার একটি অংশ হয়ে ওঠে।”

নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, নির্দিষ্ট পুষ্টি উপাদান ও কাঠামোবদ্ধ খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ফল, শস্য, বাদাম ও ডালজাত খাদ্যে প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত মায়ো-ইনোসিটল ইনসুলিনের মতো কাজ করার ক্ষমতা রাখে এবং গবেষণায় এটি উপবাস রক্তশর্করা এবং HbA1c কমাতে সহায়ক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ও মেডিসিন অধ্যাপক ড. জেফরি মেকানিক বলেন,  “যেসব ডায়াবেটিস রোগী গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণে সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য মায়ো-ইনোসিটল খাদ্যের সাথে যুক্ত করা—সুষম খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারার সঙ্গে মিলিয়ে—উপকারী হতে পারে। তবে এটি প্রচলিত ডায়াবেটিস চিকিৎসার বিকল্প নয়, বরং চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহারযোগ্য একটি সহায়ক উপাদান।”