উত্তর–পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত শিলিগুড়ি করিডোরকে আরও মজবুত করতে ভারতীয় সেনা নিয়েছে বিশেষ রণকৌশল। সম্প্রতি প্রতিবেশী বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক সমীকরণে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা ঘিরে নয়াদিল্লিতেও সতর্কতা জারি হয়েছে। ঠিক এই প্রেক্ষাপটে সীমান্ত নিরাপত্তা ও কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করতে সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভারতীয় সেনা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান — আসামের ধুবরি, বিহারের কিষণগঞ্জ ও উত্তরবঙ্গের চোপড়া এলাকায় নতুন গ্যারিসন বা সেনা ঘাঁটি স্থাপন করেছে। এই তিনটি ঘাঁটি এমন স্থানে তৈরি করা হয়েছে, যা কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে অতি নিকটে ও শিলিগুড়ি করিডোরের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিলিগুড়ি করিডোর, যাকে সাধারণত ‘চিকেনস নেক’ বলা হয়, ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর–পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করে। মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া এই সরু ভূখণ্ডই সমগ্র উত্তর–পূর্ব ভারতের জীবনরেখা। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই করিডোর কোনোভাবে অচল হয়, তবে উত্তর–পূর্ব ভারতের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই কারণেই করিডোর রক্ষায় ভারতীয় সেনার এই নতুন ঘাঁটিগুলো অত্যন্ত কৌশলগত।
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন ঘাঁটিগুলোতে থাকবে দ্রুত মোতায়েনযোগ্য বাহিনী, উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা, রাডার ও ড্রোন মনিটরিং প্রযুক্তি সাথে অত্যাধুনিক পরিকাঠামো। সীমান্তে বেআইনি অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, অস্ত্র পাচার ও বিদেশি গোয়েন্দা তৎপরতা রোধে এই ঘাঁটিগুলোর ভূমিকা হবে মুখ্য।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিভিন্ন উস্কানিমূলক মন্তব্যের ফলে নয়াদিল্লি উদ্বিগ্ন। প্রতিবেশী দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে—এই আশঙ্কাতেই প্রতিরক্ষা বাহিনী আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ শুধু সীমান্ত সুরক্ষার জন্য নয়, বরং এটি ভারতের বৃহত্তর কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা, চীন–বাংলাদেশ সীমান্তের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ ও উত্তর–পূর্ব ভারতের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এই তিনটি গ্যারিসনের তাৎপর্য অপরিসীম।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশের নতুন প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত একটি বিতর্কিত মানচিত্রে ভারতের কিছু সীমান্ত অঞ্চল ভুলভাবে প্রদর্শিত হয়েছে, যা নয়াদিল্লিতে কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের মতে — “এই মানচিত্র বিতর্ককে দেখা হচ্ছে একটি পরিকল্পিত উস্কানি হিসেবে, যার লক্ষ্য ভারতের কূটনৈতিক সংযম পরীক্ষা করা ও দক্ষিণ এশিয়ার সূক্ষ্ম ভারসাম্যের মধ্যে অবিশ্বাসের বীজ বপন করা।”
নয়াদিল্লির মতে, এই ঘটনার পিছনে পাকিস্তানি সামরিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা থেকেও সরে আসা যাচ্ছে না। যা এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য বিপজ্জনক বার্তা বহন করছে। মনে করা হয়েছে, ভারতের এই নতুন সামরিক ঘাটি শুধু প্রতিরোধমূলক নয়, বরং এটি প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা — ভারতের সীমান্ত ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো আপস হবে না।
এই তিনটি নতুন গ্যারিসন কার্যকর শিলিগুড়ি করিডোরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হবে আরও শক্তিশালী, উত্তর–পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের সংযোগ সুরক্ষিত বৃদ্ধি করবে।
