রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি বজায় রাখা সাংবাদিকদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। কারণ তারা সমাজের দর্পণ হিসাবে কাজ করেন। রাজ্যের বর্তমান সরকার মিডিয়া বান্ধব সরকার। সরকারের কাজের ভালো মন্দ ধরিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও সংবাদ মাধ্যমের। আজ আগরতলার সুকান্ত একাডেমি প্রেক্ষাগৃহে জাতীয় প্রেস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ফেইক নিউজ যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়েব মিডিয়া কিংবা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে এতবেশি হচ্ছে আজকাল যে মানুষ কিন্তু সেগুলি বিশ্বাস করবে না। ভুয়ো খবর বা সংবাদ কিন্তু মানুষ গ্রহণ করবে না। সাংবাদিকরা সবকিছু দেখে রাখেন। সাংবাদিকতা একজন সাংবাদিকের পেশার পাশাপাশি একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও। অন্যথায় সাংবাদিকতা পেশায় পূর্ণতা আসবে না। সাংবাদিকরা হচ্ছেন সমাজের দর্পণ। সংবাদ সংগ্রহ করে তাকে সঠিকভাবে পরিবেশন করা একটা বিশেষ আর্ট। অনেক কষ্ট ও পরিশ্রমের ফলে এই আর্ট (কৌশল) রপ্ত করতে হয় তাদের। আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনটা একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন। সাংবাদিকদের জন্য এই দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ত্রিপুরায় দুজন সাংবাদিক হত্যা মামলায় ন্যায় বিচার প্রদানের চেষ্টা করছে বর্তমান সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি আমি। ১৬ নভেম্বর জাতীয় প্রেস দিবস প্রতি বছরই আমরা আয়োজন করে থাকি। এই উপলক্ষে সেমিনার বা কর্মশালা খুবই প্রয়োজন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মাসে অন্তত একবার হলেও এধরণের আলোচনা সভা করা দরকার। প্রয়োজনে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর যথাযথ সহায়তা করবে। এটা ফেইক নিউজ সম্পর্কেও হতে পারে কিংবা অন্যান্য বিষয় নিয়েও। মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে আমি সমস্ত ডিএম ও এসপিদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করি, কথা বলি। আর সেখানে সংবাদপত্রের বিভিন্ন কাটিং সম্পর্কে তাদের কাছ থেকে ভুল ও সত্যতা বিষয়ে যাচাই করে নিই। যদি দেখা যায় যে সেসব খবরে ভুল তথ্য থাকে তবে তাদেরকে রিজয়েনদার (প্রতিবাদ পত্র) দিতে বলি। সরকার ঠিকভাবে চলছে কিনা কিংবা ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমের উপর বর্তায়। মানুষের জন্য সেই কাজ করতে হয় সংবাদ মাধ্যমকে। আর এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিন্যাস সুসংহত রাখার দায়িত্ব সাংবাদিকদের। আর ইয়েলো জার্নালিজম (হলুদ সাংবাদিকতা) খুবই উদ্বেগের বিষয়। এনিয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এই বিষয়টি নিয়েও সেমিনারের আয়োজন করা যায়।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, মিথ্যে খবর, অর্ধসত্য প্রচার, নির্বাচনের সময় বিভাজনমূলক কৌশল, অনলাইন হেইট স্পিচ – এসব প্রবনতা আজ সাংবাদিকদের কাছে সত্যিকার অর্থে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। মতপ্রকাশ ও বাক স্বাধীনতা মিডিয়ার অন্যতম প্রাণশক্তি। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, নৈতিকতা, শিষ্টাচার, আইন শৃঙ্খলা – এসব মাথায় রেখে সংবাদ পরিবেশন করলে সবার জন্য ভালো হবে। আর মিডিয়া ও রাজনীতির মধ্যে একটা যথাযথ ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে। ডাঃ সাহা বলেন, আমাদের এই সরকার মিডিয়া বান্ধব সরকার। সম্প্রতি প্রবীণ ও বরিষ্ঠ সাংবাদিকদের নিয়ে মিডিয়া উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিজ্ঞাপন, এক্রিডিটেশন, সাংবাদিক কল্যাণ সম্পর্কিত সাব কমিটিও গঠন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অরিন্দম লোধ, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব পি কে চক্রবর্তী, অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য, আগরতলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি প্রণব সরকার, বরিষ্ঠ সাংবাদিক মানস পাল, শাণিত দেবরায় সহ অন্যান্য বিশিষ্ট সাংবাদিকগণ। অনুষ্ঠানে রাজ্যের দুই প্রবীণ সাংবাদিক অমরপুরের প্রাণময় সাহা এবং কৈলাশহরের অনুপম ভট্টাচার্যকে শাল, স্মারক ও আর্থিক সম্মাননা দিয়ে সংবর্ধিত করা হয়।
