নিউইয়র্কের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র — ইতিহাস গড়লেন জোহরান মামদানি

নিউইয়র্ক সিটির রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণ রাজনীতিক জোহরান মামদানি (Zohran Mamdani)। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন শহরের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশিয়ার বংশোদ্ভূত মেয়র হিসেবে।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এই প্রার্থী একসময় নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য ছিলেন। এবার তিনি প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে পরাজিত করে অর্জন করলেন এই ঐতিহাসিক বিজয়।

জোহরান মামদানি জন্মগ্রহণ করেন উগান্ডার কাম্পালা শহরে। তাঁর বাবা মাহমুদ মামদানি একজন প্রখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী, আর মা মীরা নাইর বিশ্ববিখ্যাত ভারতীয়-আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা। শৈশবে পরিবার সহ তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন ও নিউইয়র্কেই বড় হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন ও রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

জানা যায়, নির্বাচনী প্রচারে মামদানি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাধারণ মানুষের জন্য বাস ফ্রি পরিষেবা চালু করবেন। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে রাখবেন ও গৃহহীনতা কমাবেন। শিশু যত্ন ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করবেন। ধনী শ্রেণির উপর কর বৃদ্ধি করে শহরের অর্থনীতি পুনর্গঠন করবেন। এই অঙ্গীকারগুলিই তাঁকে সাধারণ ভোটারের কাছে পৌঁছে দেয় ও শহরের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়।

ভারতের মাটি থেকেও আনন্দের বন্যা বয়ে যায় তাঁর এই জয়ে। বিশেষ করে দিল্লি ও কলকাতায় মীরা নাইর–এর ভক্তরা ও দক্ষিণ এশিয়ার সম্প্রদায়ের মানুষজন উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে শুভেচ্ছা জানান বলিউড তারকা, সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদরা। নিউইয়র্কে দক্ষিণ এশিয়া ও মুসলিম সমাজে চলছে বিজয় উৎসব— মিষ্টি বিতরণ, অভিনন্দন মিছিল ও আলোচনাচক্রে মুখর শহর।

তবে সামনে চ্যালেঞ্জের পাহাড়। নিউইয়র্কে বাস ও ট্রান্সপোর্ট সমস্যার সমাধান, বাড়িভাড়ার নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ—এই তিন বিষয়ই তাঁর প্রশাসনের প্রধান পরীক্ষা হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, “নিউইয়র্ক এখন এমন এক তরুণ নেতাকে পেয়েছে, যিনি শহরের বহুত্ববাদ, সহনশীলতা ও সমতার প্রতীক।”

জোহরান মামদানির বিজয় শুধু এক ব্যক্তির জয় নয়—এটি এক নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন ও আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি। এক ভারতীয় মায়ের সন্তান হয়ে, আফ্রিকার মাটিতে জন্ম নিয়ে, আমেরিকার নিউইয়র্কের নেতৃত্বে আসা—এই গল্পটি আজ লক্ষ অভিবাসীর অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছে।