করোণা রোগী দেখে যেখানে অনেকেই দূর দূর – ছাই ছাই করে, তার ঠিক উল্টো দিকেই নিজের বাড়িতে করোণা আক্রান্ত রোগীদের রেখে সেবা-যত্ন করছেন পুরাতন মালদা পুরসভা এলাকার জনৈক এক ব্যবসায়ী স্নেহাংশু ভট্টাচার্য। অক্সিমিটার থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে পরিষেবা দেওয়া, সময়ে সময়ে করোণা আক্রান্ত রোগীদের ওষুধ খাওয়ানো, সকালের জলখাবার, দুপুর ও রাতের পেটপুরে খাবারের ব্যবস্থা করেছেন স্নেহাংশুবাবু । নিজের বাড়িতে একপ্রকার সেফ হাউস তৈরি করে চিকিৎসা চালাচ্ছেন অসহায় করোনা রোগীদের। তাঁর এই উদ্যোগ দেখে রীতিমতো হতবাক পুরাতন মালদা পুরসভা এবং প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জানতে পেরে স্নেহাংশুবাবুর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে পুরসভা প্রশাসনের কর্তারা। এমনকি করোনা রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সব রকম ভাবে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে পুরসভা ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ইতিমধ্যে ওই ব্যবসায়ী বাড়িতে থাকা অন্তত চার থেকে পাঁচজন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে নিজেদের বাড়ি ফিরেছেন। আপাতত কয়েকজন করোণা রোগী রয়েছে সেখানে। যাদের নিয়ম করে ওষুধ দেওয়া থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা একা হাতেই করছেন জনৈক ওই ব্যবসায়ী।
পুরাতন মালদা পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের বাচামারি কলোনি এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী স্নেহাংশু ভট্টাচার্য। দোতলা বাড়ির ওপর তলায় রয়েছে তার স্ত্রী, বৃদ্ধ বাবা-মা, আর নিচ তলার একটা অংশকেই সেফ হাউসের মতো তৈরী করে করোণা রোগীদের রীতিমত চিকিৎসায় মশগুল হয়ে পড়েছেন স্নেহাংশুবাবু। তার চিকিৎসা কেন্দ্রে বেড তৈরি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে অক্সিমিটার রাখার ব্যবস্থা করেছেন। পাশাপাশি নিয়ম করে একজন চিকিৎসকও আসছেন করোণায় আক্রান্ত রোগীদের দেখতে। রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ কিনে দেওয়া এবং সকালের জলখাবার থেকে দুপুর ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। আর এতে করেই অসুস্থ করোনা রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। ফেরার সময় দুই হাত তুলে আশীর্বাদ করছেন স্নেহাংশু ভট্টাচার্যকে।
স্নেহাংশুবাবু বলেন, প্রথম প্রথম পাড়ার কিছু মানুষ আমাকে অন্য চোখে দেখতো। কিন্তু এখন সকলেই বুঝতে পেরেছে, গত ৩ মে থেকে তিনি তার বাড়ির একটা অংশে করোনা রোগীদের রেখে চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করেছেন। ইতিমধ্যে তার এই সেন্টার থেকে পুরাতন মালদা পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তালপাড়া এলাকার বাসিন্দা কল্পনা মন্ডল, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাচামারি এলাকার বাসিন্দা গোপাল সাহা সহ বেশ কয়েকজন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন । এখন আরো চার থেকে পাঁচজন করোণা রোগী রয়েছে তার এই বাড়িতে। প্রতিদিন ডক্টর অজিত দাস নামে একজন চিকিৎসক আসছেন, রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি প্রয়োজন মতো ওষুধ দেওয়া, সময়ে-অসময়ে অক্সিজেন দেওয়ার কাজ তিনি নিজের হাতে করছেন। এমনকি সকালের জলখাবার থেকে দু’বেলা আহারের ব্যবস্থাও তিনি নিজে বসে থেকে তদারকি করছেন।
ব্যবসায়ি স্নেহাংশু ভট্টাচার্য বলেন , এপ্রিল মাসের শেষের দিকে আমার এক পরিচিত ব্যক্তি করোনায় মরণাপন্ন অবস্থা হয়ে পড়েছিল, তাকে তার এলাকার একাংশ লোকেরা কুনজরে দেখছিল। পরিবার থেকেও সাহায্য পাচ্ছিল না। সেই সময় আমি ওই ব্যক্তিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসে চিকিৎসা করে সুস্থ করেছি। এরপর থেকেই আমার মন চলে যায় করোনা রোগীদের সুস্থ করার লক্ষ্যে। আর তারপরে নিজের বাড়িতে সেফ হাউসের মতো পরিকাঠামো গড়েই করোনায় আক্রান্ত এলাকার রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এক্ষেত্রে আমি কারোর কাছে কোনো সহযোগিতা চাইনি। নিজের গাঁটের টাকা খরচ করেই আপাতত অসহায় করোনা রোগীদের এই পরিষেবা দিচ্ছি, আগামীতেও দিব।
পুরাতন মালদার পুরসভার প্রশাসক কার্তিক ঘোষ জানিয়েছেন, স্নেহাংশু ভট্টাচার্যের এই উদ্যোগ দেখে সত্যিই বিস্মিত হয়ে পড়েছি। এরকম মানুষ সমাজে রয়েছে-বলেই সকলের উপকার হচ্ছে। করোনায় আক্রান্তদের নিজের বাড়িতে নিয়ে এসে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন ওই ব্যক্তি। তাঁকে আমরা সাধুবাদ জানাই। পুরসভা থেকে ওই ব্যক্তিকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি প্রশাসনও যাতে স্নেহাংশু ভট্টাচার্যের ছোট্ট চিকিৎসাকেন্দ্রের পরিকাঠামো চালানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে সেই অনুরোধ জানাবো।