কিভাবে ডাক্তারি ছেড়ে বিপ্লবী হলেন চে গেভারা: জেনেনিন তার ৯৩ তম জন্মদিনে

1 min read

বিপ্লবের পরিকল্পনায় কাস্ত্রোর প্রথম পদক্ষেপ ছিল মেক্সিকো থেকে কিউবায় আক্রমণ চালানো। ১৯৫৬ সালের নভেম্বরে তারা কিউবার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই বাতিস্তার সেনাবাহিনী তাঁদের আক্রমণ করে। সে যাত্রায় মাত্র ২২জন বেঁচে যান। চে গেভারা লিখেছিলেন, সেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সময় তিনি তাঁর চিকিৎসাসামগ্রীর সঙ্গে একজন কমরেডের ফেলে যাওয়া এক বাক্স গোলাবারুদও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তুলে নিয়েছিলেন। যা তাঁকে পরিশেষে চিকিৎসক থেকে বিপ্লবীতে পরিণত করল!

ওটাই ছিল সেই সন্ধিক্ষণ। যে-লগ্নে এক তরুণ চিকিত্‍সকের মনে জন্ম নিল এক বিপ্লবী! সেই বিপ্লবী, যাঁর নাম এর্নেস্তো চে গেভারা, জন্মেছিলেন আজকের দিনে, এই ১৪ জুনে। সালটা ছিল ১৯২৮ । তিনি ছিলেন এক বরেণ্য আর্জেন্টিনীয় মার্কসবাদী, বিপ্লবী, চিকিৎসক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, গেরিলা নেতা, কূটনীতিবিদ, সামরিক তত্ত্ববিদ এবং কিউবা বিপ্লবের প্রধান ব্যক্তিত্ব। তার প্রকৃত নাম ছিল Ernesto Guevara de la Serna। তবে সারা বিশ্ব তাঁকে লা চে বা কেবলমাত্র চে নামেই চেনে। মৃত্যুর পর তাঁর মুখচিত্রটি একটি সর্বজনীন প্রতিসাংস্কৃতিক প্রতীকে পরিণত হয়। যা ক্রমে বিপ্লব-প্রতিবাদের বিশ্বপ্রতীকে পরিণত হয়।

কেমন প্রতীক? ফুটবলের ঈশ্বর স্বয়ং মারাদোনা চে’র ভক্ত ছিলেন। এমনকি মারাদোনার হাতে ছিল চে’র বিপ্লবপ্রাণিত মুগ্ধ দীপ্ত মুখচ্ছবির উল্কিও! মারাদোনা নিজেও তো বিশ্বফুটবলে এক মূর্তিমান বিপ্লব।

অথচ, বিপ্লব তো নয়ই, এমনকি ডাক্তারিও নয়। খেলধুলো আর কবিতা ছিল তাঁর প্রথম পছন্দ। ১২ বছর বয়সে দাবা খেলা শেখেন বাবার কাছে। স্থানীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেও শুরু করেন। এছাড়া সাঁতার, ফুটবল,গলফ, শুটিং সবই করতেন। তিনি রাগবি ইউনিয়নেরও সদস্য ছিলেন। বুয়েনস এয়ারস বিশ্ববিদ্যালয়ের রাগবি দলের হয়ে খেলেছেনও। তবে চে গেভারা সব চেয়ে মুগ্ধ ছিলেন সাইক্লিংয়ে।

সারাটা জীবন চে কবিতার প্রতি আসক্ত ছিলেন। পাবলো নেরুদা, জন কিটস, এন্টনিও মারকাদো, ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা, গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল এবং ওয়াল্ট হুইটম্যান– অনেকেই তাঁর মনে ও মননে স্বপ্ন ও কল্পনার মায়াজাল বুনে দিয়েছিল। তিনি স্বয়ং ভালো আবৃত্তিও পারতেন।

অবশ্য পড়াশোনা করে শেষ পর্যন্ত চিকিত্‍সকের জীবন শুরু হল তাঁর। ডাক্তারি ছাত্র হিসেবেই চে সমগ্র লাতিন আমেরিকা ভ্রমণ করেছিলেন। এই সময়েই তিনি এই সব অঞ্চলের দারিদ্র্য দেখে মুষড়ে পড়েন। এবং এই সময় থেকেই তাঁর মনে বিপ্লবেরর একটা অঙ্কুর জাগ্রত হতে থাকে। তিনি মনে মনে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এই অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণ হল একচেটিয়া পুঁজিবাদ, নব্য ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ; এবং এর একমাত্র সমাধান বিশ্ব বিপ্লব। এবং ধীরে ধীরে এই বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে চে রাষ্ট্রপতি জাকোবো আরবেনজ গুজমানের নেতৃত্বাধীন গুয়াতেমালার সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। এবং ক্রমে তাঁর জীবনের গতিপথ বদলায়। আদর্শ পাল্টায়। তিনি স্টেথো ছেড়ে বন্দুক তুলে নেন।

বলিভিয়ার সেনাবাহিনীর চে-কে ১৯৬৭ সালের ৭ অক্টোবর গ্রেফতার করে এবং তাঁর মৃত্যু হয় ৯ অক্টোবর দুপুর ১.১০ নাগাদ। মৃত্যুর সময়কাল এবং ধরন নিয়ে মতভেদ এবং রহস্য রয়েছে। ধারণা করা হয়, ১৯৬৭ সালের এই দিনটিতে লা হিগুয়েরা নামক স্থানে নিরস্ত্র অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয় বন্দী চে গেভারাকে।

চে গেভারা কিউবান ভাষায় লেখালেখিও করেছেন। লিখেছেন প্রায় ৭০টি নিবন্ধ। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত ভাষণ আর সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রায় ২৫০-এর মতো। বিভিন্ন ব্যক্তিত্বকে লেখা তার অসংখ্য চিঠির মধ্যে ৭০টির মতো পাওয়া যায়। তাঁর লেখালেখি নিয়ে রচনাবলিও প্রকাশিত হয়েছে।

You May Also Like